কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর বলে থাকেন সেবা বিক্রি করা যায় না। এই প্রেক্ষাপটেই সোমবার বিধানসভায় রাজ্য সরকার পেশ করে স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত একটি বিল। তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমগুলিকে চিকিৎসাজনিত খরচের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। সেই তালিকার বাইরে রোগীর পরিবারের কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া যাবে না। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সরকারের এই পদক্ষেপকে কুর্নিশ জানিয়েছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ।
এদিন বিধানসভায় পেশ করা হয় দি ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট আমেন্ডমেন্ট বিল ২০২৫। এই বিলের মূল বিষয়বস্তু হল, রাজ্য সরকার চাইছে বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম এবং ক্লিনিক সেন্টারগুলি কোনোভাবেই যেন অতিরিক্ত খরচ না নেয়। বিলে স্পষ্টভাবে লেখা আছে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে প্যাকেজ নির্ধারিত করা থাকবে তার বাইরে কোন টাকা নেওয়া যাবে না। ক্লিনিক্যাল ডেটা প্রত্যেকদিন সংগ্রহ করতে হবে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে রোগীর অবস্থা যদি অন্যরকম কিছু হয়, তাহলে অবশ্যই তা আগে থেকে রোগীর পরিবারকে জানাতে হবে। এবং সেক্ষেত্রে প্যাকেজের বাইরে যদি কোনও বিল হয়, তা অবশ্যই আগে থেকে রোগীর পরিবারকে জানাতে হবে। প্যাকেজ রেট চার্ট এমনভাবে ডিসপ্লে করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষের সহজেই নজরে পড়ে এবং তা বিভিন্ন ভাষাতেও হওয়া প্রয়োজন।
এদিন বিলের উপর আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূল বিধায়ক ডাক্তার রানা চট্টোপাধ্যায় বলেন, সেবাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে বিল এনেছে তা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি হাসপাতালগুলির কাছে লাভের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল রোগীর প্রতি যত্নশীল হওয়া। এতে বিশ্বাস এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে।
অনেক ক্ষেত্রেই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্যাকেজের অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। আবার রোগী ভর্তি হওয়ার সময় যে প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল, ছুটির পর রোগীর বিলে তা কয়েকগুণ বেড়ে যেতেও দেখা যায়। এক্ষেত্রে বিমা সংস্থাগুলি নির্ধারিত প্যাকেজের অতিরিক্ত টাকা দিতে রাজি হয় না। বেসরকারি হাসপাতালগুলির পরিষেবায় এই ‘হিডেন কস্টকেই’ বন্ধ করতে চাইছে রাজ্য।
তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেছেন, রোগীর পরিবারকে অন্ধকারে রেখে যেন কোনও সিদ্ধান্ত না নেয় বেসরকারি হাসপাতালগুলি। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চিকিৎসা পরিষেবা দিলে বেসরকারি হাসপাতালগুলির প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস আরও বাড়বে। আর উচিত ২৪ ঘণ্টা অন্তর যেন বিল দেওয়া হয় রোগীর পরিবারকে। তৃণমূল বিধায়ক ডাঃ সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেন, আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সংগ্রহ করে রাখতে হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গেই চিকিৎসা বিল তৈরি করতে হবে। এই বিলের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী এবং রফিকুল ইসলাম মণ্ডল রাজ্য সরকারের উন্নয়নের প্রসঙ্গগুলি তুলে ধরেন। তবে বিজেপির কোনও সদস্য বিলের উপর আলোচনায় অংশ নেননি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন