কলকাতা: অপরাধ যদি নিয়মিত হয় এবং অপরাধী যদি ধরা না পড়ে, সেক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসে ফুটতে থাকে সে। অপরাধ বিজ্ঞানে এমনটাই বলা হয়। এই তত্ত্ব প্রবলভাবে খাটে কলেজ গণধর্ষণ কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের লাগামছাড়া ক্ষমতায়নে। তদন্ত যত এগচ্ছে, ততই সামনে আসছে সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে মনোজিৎ মিশ্রের ‘কর্মকাণ্ড’। কারণ, আরও এক তরুণীর সন্ধান পেয়েছে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট)। মনোজিৎ ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন তিনিও।
ঘটনাস্থল? ল’ কলেজের সেই গার্ডরুম। গত বছর। তখনও বের করে দেওয়া হয়েছিল গার্ডকে। তারপর ধর্ষণের চেষ্টা। কিন্তু কোনওভাবে পালিয়ে যান সেই ছাত্রী। তবে একেবারে পার পাননি তিনি। ছাড়তে হয়েছিল কলেজ। কারণ, তাঁর নগ্ন ভিডিও তুলে লাগাতার ব্ল্যাকমেল চালিয়ে গিয়েছিল ‘দাদা’র বাহিনী। সে জন্য থানায় অভিযোগ করেননি তরুণী। এই ঘটনার পর তিনিই দ্বারস্থ হন পুলিসের। সেই ঘটনায় কী হয়েছিল, কবে হয়েছিল—বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হচ্ছে তরুণীর থেকে। পুলিস জেনেছে, সেই ছাত্রীকেও প্রথমে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল মনোজিৎ। প্রত্যাখ্যান করাতেই আছড়ে পড়ে আক্রোশ। জানা গিয়েছে, ওই তরুণীকে সাক্ষী তালিকায় রাখতে পারে পুলিস। তাঁর গোপন জবানবন্দির জন্য আদালতের কাছে আবেদনও জানাতে পারেন।
পুলিস সূত্রে জানা যাচ্ছে, শুধু ওই তরুণী নন। অভিযোগের মেঘ যতবার ঘনিয়েছে, ততবারই ‘ম্যানেজ’ করে নিয়েছে মনোজিৎ। নজর করার মতো বিষয় হল, সব মামলাই ছিল আলিপুর কোর্টের অন্তর্ভুক্ত থানায়। সে নিজেই যেহেতু সেখানে প্র্যাকটিস করে, তাই তার ‘প্রভাব’ এবং ‘আত্মবিশ্বাস’ থাকত তুঙ্গে। এবার ভাগ্য এবং প্রভাব, কোনওটাই সঙ্গ দেয়নি। কারণ, একে একে তথ্য-প্রমাণে জাল গুটিয়ে আনছে পুলিস। আর তাই নির্যাতিতার মামাও রবিবার বলেছেন, ‘তদন্ত সঠিক পথে এগচ্ছে। আমরা এখনও পর্যন্ত সন্তুষ্ট। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ দোষীদের সাজার দাবিতে পথে নামছে মানুষও। এদিন সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে জেলা—সর্বত্র কসবা কাণ্ডের জেরে একাধিক বিক্ষোভ মিছিল হয়। শ্যামবাজার ও গড়িয়াহাটে দু’টি মশাল মিছিল করে বিজেপি। অন্যদিকে, জয়নগর-মজিলপুর পুরসভা এলাকায় এসইউসিআইয়ের যুব সংগঠন এআইডিওয়াইও-এর উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়। স্থানীয় টাউন হলের সামনে থেকে এই মিছিল শুরু হয়ে জয়নগর-মজিলপুর স্টেশনে গিয়ে শেষ হয়।
তবে রবিবার সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে একপ্রস্থ গোলমাল হয় জাতীয় মহিলা কমিশনের পরিদর্শন নিয়ে। এদিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার। তিনি ঘটনাস্থলের ছবি তুলতে গেলে বাধা দেয় পুলিস। সেই বাধাদানকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন