নয়াদিল্লি: মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিপর্যয়ের পর কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। শনিবার এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৪। তার মধ্যে ৩৩ জনই প্রাণ হারিয়েছেন বিমান আছড়ে পড়ার পর বিস্ফোরণের ঘটনায়। সেই তালিকায় রয়েছেন ডাক্তারি পড়ুয়া থেকে চা দোকানির ছেলে। তাঁদের পরিবারকেও এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে টাটা গোষ্ঠী। এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে এদিনই অন্তর্বর্তী সহায়তা হিসেবে একমাত্র জীবিত যাত্রী রমেশ সহ প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু কার ভুলে এই ভয়াবহ বিপর্যয়? গাফিলতি ছিলই। তবে সেটা কোন স্তরে হয়েছে? প্রশ্ন এখন সেটাই।
বিমানটি যাত্রার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত কি না, সেটা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করার জন্য ফ্লাইট সিকিওরিটি অ্যান্ড ইন্সপেকশন ক্লিয়ারেন্সের একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিভ প্রসিডিওর (এসওপি) রয়েছে। সেটাও কি সম্পূর্ণ রূপে পালন করা হয়েছিল? প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের ধারণা, তা করা হয়নি। যদি সেটাই সত্যি হয়, তাহলে ‘অল ক্লিয়ার’ সিগন্যাল দেওয়ার আগে সুরক্ষা বলয় পরীক্ষার কোন অংশটি আদৌ পালিত হয়নি? নাকি ফ্লাইট ইন্সপেকশন রিপোর্টে ছোটখাটো ত্রুটির উল্লেখই করেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা? অথবা মনোযোগের অভাবে ধরাই পড়েনি সেরকম কিছু! অর্থাৎ, হিউম্যান এরর! এক অথবা একাধিক টেকনিক্যাল কর্মীর গাফিলতি হলে প্রয়োজন গোয়েন্দা তদন্ত। ঠিক এই কারণেই এদিন পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ভারত সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে এই কমিটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তদন্ত করবে। এই কমিটিতে একদিকে যেমন থাকছেন আমেদাবাদের পুলিস কমিশনার ও তাঁর অ্যান্টি টেররিজিম স্কোয়াডের স্পেশাল টিম, তেমনই ভারতের সর্বোচ্চ গুপ্তচর সংস্থা আইবির স্পেশাল ডিরেক্টরও। কমিটির সদস্য হবে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ টিম। তিন মাসের মধ্যেই তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে তাদের।
এই মুহূর্তে বেশি জরুরি হল, বোর্ডিং শুরুর ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার আগে ঠিক কী কী স্তরের ইন্সপেকশন হয়েছে সেটা জানা। সামগ্রিক একটি ইন্সপেকশন রিপোর্ট পাইলট ও কো-পাইলটকে দেখানো হয়। তার মধ্যে সন্দেহজনক কোনও সূত্র ছিল কী? সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রাথমিক তদন্তে এবং শেষ মুহূর্তের ভিডিও ফুটেজ দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ডুয়েল ইঞ্জিন ফেলিওর’ যদি হয়েও থাকে, সেটা কখন হল? কারণ, ওই অভিশপ্ত বিমানটি রানওয়েতে ছোটার সময় ইঞ্জিনের সমস্যা হয়নি। ছিল না কোনও ‘অয়েল কন্ট্যামিনেশন সাইন’ও। তাহলে উড়ানের ঠিক পরই কেন ঊর্ধ্বমুখী স্পিড নিতে ব্যর্থ হল ড্রিমলাইনার? অর্থাৎ, টেক অফের পর যে প্যারামিটারগুলি সক্রিয় থাকা দরকার, ঠিক সেখানেই কোনও যান্ত্রিক গোলমাল হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, বোয়িং ড্রিমলাইনারে পাইলট অথবা কো-পাইলট যদি ভুল করেও ফ্ল্যাপ বাটন বিপরীতমুখী করেন, সঙ্গে সঙ্গে ককপিটে অ্যালার্ম বাজবে। ভুল সংশোধনের সুযোগ ও সময় পাবেন পাইলট। সেই সময় তিনি পেলেন না কেন? যখন ফ্ল্যাপ ডাউন থাকার কথা, সেই সময় ককপিটে পাইলট ও কো-পাইলট অন্য কোনও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন কী? যা আরও মারাত্মক কিছু? কী সেটা? শনিবার অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রামমোহন নাইডু বলেছেন, ‘আশা করছি, অনেক প্রশ্নের উত্তর দেবে ব্ল্যাক বক্স। শনিবার বিকেল থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে ব্ল্যাক বক্সের!’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন