প্যাচপেচে গরম... দরদর করে ঘাম। গ্রীষ্মকাল এলেই এ তো চেনা ছবি। কিন্তু বর্তমান জীবনযাত্রায় গরমের জন্য বাড়িতে বসে থাকার জো নেই। কাজ করতে রাস্তায় বেরিয়ে পোশাক ভিজে যাচ্ছে ঘামে। তার সঙ্গে ক্লান্তি। দূষণ যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরম। প্রশ্ন জাগে, এই অতিরিক্ত ঘাম কমানোর কি কোনও উপায় নেই?
ঘাম কেন হয়?
ঘাম আদতে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। আমাদেরও শরীরের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা রয়েছে। সেই তাপমাত্রা যখনই বেড়ে যায়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে রক্ষার জন্য তাপমাত্রা কমানোর দরকার পড়ে। আর ঘামের মাধ্যমেই আমাদের শরীর সেই অতিরিক্ত তাপ শরীর থেকে বের করে দেয়। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে অতিরিক্ত ঘামের জন্য আবহাওয়া যেমন দায়ী, তেমনই অনেক সময় শারীরিক সমস্যাও দায়ী হতে পারে। কারও থাইরয়েড বা রক্তচাপ বেশি থাকলে বেশি ঘাম হয়। আবার কমবয়সিদের মেটাবলিজম বেশি থাকে, সেক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ঘাম হয়। আবার কারও হরমোনের সমস্যা থাকলে বা হরমোনাল থেরাপি চালু থাকলেও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে সমস্যার কারণ খুঁজে বের করে চিকিৎসা করানো দরকার। আর শুধুমাত্র আবহাওয়ার কারণে ঘাম বেশি হলে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দেয়। যার ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
শরীর ঠান্ডা রাখুন
প্রথমেই বলা হয়েছে, আমাদের শরীরের অতিরিক্ত তাপ কমাতেই ঘাম নিঃসরণ হয়। তাই ঘাম যাতে কম হয়, তার জন্য আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখা জরুরি। এর জন্য সুতির জামাকাপড় পরতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্কুল থেকে ঘেমে বাড়ি ফেরে। খেলতে গিয়েও একই সমস্যা হয়। বড়দেরও রোদের মধ্যে কাজে বেরতে হয়। এক্ষেত্রে যদি একাধিকবার স্নান করা যায়, তাহলে শরীর ঠান্ডা থাকে। স্নান করতে যদি অসুবিধা থাকে, তাহলে ভিজে গামছা বা তোয়ালে দিয়ে শরীর মোছা যেতে পারে।
খাবারে থাকুক তেতো
যাদের ঘাম বেশি হয়, তাদের তেতো জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ঘামের কারণ হিসেবে পিত্তদোষকে ধরা হয়। এই পিত্তের ভারসাম্য রক্ষার জন্য তেঁতো খাওয়া উপকারী। উচ্ছে, করলা, চিরতা এগুলো নিয়মিত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। এছাড়া জামের মতো কষা জাতীয় ফলও একইরকমভাবে উপকারী। এছাড়া শরীর ঠান্ডা রাখতে কালমেঘও অত্যন্ত কার্যকর। গরমে অনেক সময়ই লিভারের সমস্যা, ফ্লু-এর মতো রোগ দেখা দেয়। সেই সব সমস্যা মোকাবিলা করতে সক্ষম কালমেঘ। মরশুমি ফল খান বেশি করে। ফলের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে।
সমাধান স্নানের জলে
যাঁদের বেশি ঘামের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা স্নান করার সময়ে জলে কর্পূর, চন্দন, তুলসী বা নিমপাতা মেশান। এছাড়া বেনা নামে একটি গাছ পাওয়া যায়। তার পাতাও জলে মিশিয়ে স্নান করা যেতে পারে। এই সবক’টিই শরীর ঠান্ডা রেখে ঘাম কমায়, ঘামের জন্য ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমায় ও ত্বক ভালো রাখে।
ফুট বাথ
ঘাম কমানোর আরেকটি উপায় ফুট বাথ। সুযোগ পেলেই জলের মধ্যে কর্পূর, চন্দন বা তুলসীপাতা দিয়ে তাতে পা ভিজিয়ে বসে থাকুন। যাঁদের হরমোনের সমস্যা রয়েছে, তার পিছনে অনেক সময়ই অতিরিক্ত স্ট্রেস দায়ী থাকে। এভাবে পা ভিজিয়ে বসে থাকলে স্ট্রেস অনেকটাই কমবে। আর তা কমলে হরমোনের সমস্যার জন্য ঘাম যাঁদের হয়, তাঁরা উপকার পেতে পারেন। চোখের উপরেও তুলো দিয়ে যদি গোলাপ জল দেন, তাহলেও স্ট্রেস কমে।
বাদ ভাজাভুজি
গরমে ভাজাভুজি, জাঙ্ক ফুড খাওয়া কমাতে হবে। তার সঙ্গে বাড়াতে হবে জল পান। ২.৫-৩ লিটার পানীয় আমাদের প্রয়োজন হয়। পানীয় বেশি গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের তাপ কিছুটা মূত্রের মাধ্যমেও বের হয়ে যায়। ফলে ঘাম কম হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন