তমলুক: জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পর থেকেই দীঘায় পর্যটক ও ভক্তদের ঢল নেমেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক হোটেল কর্তৃপক্ষ রাতারাতি ভাড়া বাড়িয়েছে। অটো, টোটো চালকরাও ঝোপ বুঝে কোপ মারছেন। অগ্রিম হোটেল বুকিং করেও ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রচুর। ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীঘার প্রতিটি হোটেলের ভাড়ার তালিকা ডিসপ্লে বোর্ডে ঝোলানোর জন্য প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। এই নির্দেশ অমান্য করলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হোটেল মালিকদের সঙ্গে মিটিং করে রাজ্য সরকারের কড়া মনোভাবের কথা জানানো হয়েছে। এনিয়ে একটি ফোন নম্বর চালু করার ভাবনাচিন্তা চলছে। দীঘার কোনও হোটেল, অটো, টোটো কিংবা কোনও দোকানদারের মাধ্যমে পর্যটকরা হেনস্তার শিকার হলে সেই নম্বরে ফোন করে পুলিসকে জানানো যাবে। তারপর উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে পুলিস।
সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, অতিরিক্ত জেলাশাসক(সাধারণ) হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করেছেন। সেখানে রেটচার্ট ডিসপ্লে বোর্ডে ঝোলানো বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি একটি ফোন নম্বর চালু হবে। কোথাও পর্যটক কোনও সমস্যায় মুখোমুখি হলে সেই নম্বরে ফোন করে পুলিসের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
দীঘায় পর্যটকদের ভিড়ের সুযোগ নিয়ে হোটেল মালিকরা রাতারাতি ভাড়া অনেকটাই বাড়িয়েছেন। ডিএসডিএ অফিস লাগোয়া একটি হোটেলের কর্ণধার সুভাষ শীট বলেন, মন্দির উদ্বোধনের আগে আমরা এসি রুম ১৩০০-১৪০০টাকায় দিয়েছি। হাজার টাকাতেও এসি রুম দিয়েছি। জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পর সেইসব রুম ১৭০০-১৮০০টাকা ভাড়া পাচ্ছি। রথযাত্রার সময় একই রুম তিন-সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়েও মানুষ নিতে চাইছেন।
শুধু হোটেল নয়, দীঘায় নেমে বহু পর্যটক অটো, টোটো চালকদের খপ্পরে পড়ে মোটা টাকা খোয়াচ্ছেন। আগে ওল্ড দীঘা থেকে নিউ দীঘা টোটো ভাড়া ছিল ২০টাকা। এখন এক লাফে সেটা বেড়ে ১০০টাকা। তাঁদের অনেকের মধ্যে কম সময়ে বেশি টাকা কামানোর লোভ জাঁকিয়ে বসেছে। বাসে, ট্রেনে চড়ে দীঘায় যাওয়া পর্যটকরা ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রাইভেট গাড়ি, অটো এবং টোটোর উপর নির্ভরশীল। সবক’টির ভাড়াই একলাফে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরের ভিড়ের সুযোগ নিচ্ছে তারা। এনিয়ে ধারাবাহিকভাবে অভিযোগ প্রশাসনের কাছে আসছে। শুধু তাই নয়, অগ্রিম বুকিং করা হোটেলে রুম দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, অনেক বেশি ভাড়ায় অন্যকে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। হোটেল মালিকদের একাংশের এমন আচরণ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হচ্ছেন অনেকে। এরফলে দীঘার ইমেজে প্রভাব পড়ছে।
দীঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে মিটিং করেছি। সেখানে ঠিক হয়েছে, ২২জুনের মধ্যে সংগঠনের সদস্যপদ থাকা প্রত্যেকটি হোটেলের ভাড়ার তালিকা ডিসপ্লে বোর্ডে ঝোলাতে হবে। একইসঙ্গে তার একটি লিস্ট সংগঠনের অফিসে জমা করতে হবে। কয়েকটি হোটেল ভাড়া বাড়িয়ে পর্যটকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। আমাদের সংগঠন এই ঘটনা একদম বরদাস্ত করে না। আমরা চাই, এধরনের ঘটনা বন্ধ করতে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হোক। পুলিস পদক্ষেপ নিতে শুরু করলে রাতারাতি ভাড়া বাড়িয়ে অধিক মুনাফার লোভ ঘুচে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন