
বারুইপুর: কারও বাবা দোকান চালান। কারও বাবা রাজমিস্ত্রি বা ইটভাটায় কাজ করেন। কারও বাবা দিনমজুর। কারও মা বিড়ি বাঁধেন। এই মা-বাবার সন্তানরা মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করে চমকে দিয়েছে সবাইকে। তাদের কেউ ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়। কেউ চায় ইঞ্জিনিয়ার হতে। কিন্তু এই ছাত্র-ছাত্রীদের চলার পথে অর্থের অভাব বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বারুইপুরের চম্পাহাটি গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী ঈশিতা
নস্কর। মাধ্যমিকে ৬৩১ নম্বর পেয়েছে। মা রিনাদেবী আশাকর্মী। বাবা কার্তিক
নস্কর জামা-কাপড়ের দোকান চালান। ঈশিতা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়।
ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়। এই মেধাবী ছাত্রী বলে, ‘চিকিৎসক হয়ে গ্রামে গিয়ে
মানুষের সেবা করতে চাই। তবে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার অনেক খরচ। জানি না
কী করে পারব। আমায় স্বপ্নসন্ধান সংস্থার সুমিতকাকু পড়িয়েছেন। অনেক সাহায্য
পেয়ে এই ফলাফল।’ ঈশিতার দিদি তন্দ্রা নস্কর বলেন, ‘আমরা চাই বোন আরও
পড়াশোনা করে এগিয়ে যাক।’ এর পাশাপাশি জয়নগরের বকুলতলার মৌথিয়া বাউনি
বিদ্যাপীঠ স্কুলের ছাত্র রমাকান্ত নস্কর মাধ্যমিকে ৬২২ নম্বর পেয়েছে। তাঁর
বাবা মনতোষ নস্কর ইটভাটায় কাজ করেন। মা সত্যবতীদেবী বিড়ি বাঁধার কাজ করেন।
রমাকান্ত বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। জয়েন্ট দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। সে
বাংলায় ৮৭, ইংরাজিতে ৮০, অঙ্কে ৯৩, ভৌতবিজ্ঞানে ৯০, জীবনবিজ্ঞানে ৮১,
ইতিহাসে ৯৬, ভূগোলে ৯৫ পেয়েছে। ছাত্রটি বলে, ‘পড়াশোনাতে শিক্ষকরা অনেক
সাহায্য করেছেন। ওই স্কুলেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাই।’ ওর বাবা মনতোষ নস্কর
বলেন, ‘ছেলের পরিশ্রমের ফলেই এই ফল। সংসারে অভাব আছে তাও ছেলের ইচ্ছেপূরণ
করতে চাই।’ মৌথিয়া বাউনি বিদ্যাপীঠ স্কুলেরই ছাত্র মাহমুদ হাসান গাজি ৬৪৯
নম্বর পেয়েছে। স্কুলে প্রথম স্থান তার। মাহমুদ বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৮৪,
অঙ্কে ৯৭, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৬, জীবনবিজ্ঞানে ৯২, ইতিহাসে ৯৪, ভূগোলে ৯৬ পেয়েছে।
তাঁর বাবা সুজাউদ্দিন গাজি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মা মিনাহার গাজি
গৃহবধূ। তিনি বলেন, ‘ছেলে চিকিৎসক হতে চায়। কিন্তু পড়াশোনা কী করে চলবে
জানি না। তবে ওর ইচ্ছেপূরণ করব।’ মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের
ছাত্রী দিশা দপ্তরি ৬১৩ নম্বর পেয়েছে। অঙ্ক ছাড়া সাতটি বিষয়ে লেটার পেয়েছে।
তার বাবা বিশ্বনাথ দপ্তরী দিনমজুর। মা সুমিত্রা গৃহবধূ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন