কলকাতা: রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) টাকা জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড (জিপিএফ) তহবিলে জমা দেওয়ার সুযোগও সরকারের আছে বলে প্রশাসনিক মহল মনে করছে। ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (স্যাট) পঞ্চম বেতন কমিশনের বকেয়া ডিএ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। স্যাটের নির্দেশে বলা হয়েছিল, সরকার চাইলে ছ’মাসের মধ্যে বকেয়া টাকা কর্মীদের জিপিএফ তহবিলে জমাও দিতে পারে। তবে অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বা পেনশন প্রাপকদের বকেয়া টাকা সরাসরি দিতে হবে।
ডিএ মামলাটিতে প্রথম থেকে যুক্ত ছিল রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় জানান, স্যাটের রায়ের পর রাজ্য সরকার হাইকোর্টে সেটিকে চ্যালেঞ্জ করে। বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চে দীর্ঘ শুনানির পর, ২০২২ সালের ২০ মে প্রদত্ত রায়ে তিনমাসের মধ্যে বকেয়া মেটাতে বলা হয়েছিল। তবে তা কীভাবে টাকা মেটানো হবে রায় তা নির্দিষ্ট করেনি। সুপ্রিম কোর্টের শুক্রবারের রায়ে ছ’সপ্তাহের মধ্যে কর্মীদের বকেয়ার ২৫ শতাংশ মেটাতে বলা হয়েছে। কী পদ্ধতিতে টাকা দেওয়া হবে সেই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টও কিছু বলেনি। ফলে প্রশাসনিক মহল মনে করছে, যাঁরা এখনও কর্মরত তাঁদের জিপিএফ তহবিলে টাকা জমা করার সুযোগ আছে। তবে অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে এটা করা যাবে না। তাঁদের বকেয়া অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। মলয়বাবু জানান, হাইকোর্টের রায়ের পর সরকার পক্ষ পিএফে টাকা জমা দেওয়ার কোনও প্রস্তাব দিতেই পারত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি দায়ের করে সরকার। এখন শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পর রাজ্য সরকার কী করে, সেদিকেই নজর কর্মী মহলের।
কর্মীদের পিএফে বকেয়া ডিএ’র টাকা জমা দিলে তা রাজ্য সরকারের তহবিলে থাকবে। পিএফে জমা টাকা রাজ্য সরকার নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। জিপিএফে টাকা জমা রাখলে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা একসঙ্গে সরাসরি খরচ হবে না। অবসরের সময়ই বকেয়া টাকা কর্মীরা পাবেন। সুপ্রিম কোর্টে রায় মেনে বকেয়ার ২৫ শতাংশ দিতে সরকারের ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা।
রাজ্য সরকারের বাজেট নথিতে জিপিএফে জমা পড়া টাকা ঋণ হিসেবে দেখানো হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে পিএফ-বিমা তহবিল খাতে ৫১৯৯ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে বলে বাজেট পুস্তিকায় জানানো হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এটা ছিল ৪৪২২ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা। জিপিএফে জমা টাকার উপর কর্মীরা বছরে ৭.১ শতাংশ হারে সুদ পান। কর্মীরা অবসর গ্রহণের পর সুদসহ ফেরত পান ওই টাকা। বিশেষ প্রয়োজনে জিপিএফ থেকে অগ্রিম টাকা তুলতে পারেন কর্মীরা। জিপিএফে টাকা জমা পড়লে সরকারকে একসঙ্গে টাকা মেটাতে হবে না। এর আগে ১৯৯৮ সালে বেতন কমিশনের বকেয়া অর্থ জিপিএফে জমার নজিরও আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন