
নয়াদিল্লি: পাকিস্তানে ভারতীয় জালনোট ছাপানোর পুরো কর্মকাণ্ডটিকে সংগঠিত করে চলেছে দাউদ ইব্রাহিমের ছোটভাই আনিস ইব্রাহিম। বেশ কয়েক বছর ধরে জালনোট ছাপানোর দায়িত্বে সে। তাকে সবরকম সহযোগিতা করছে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। ‘ব’ কলমে যা ডি কোম্পানি নামে পরিচিত। জাল নোট ছাপাখানার নিরাপত্তা দেওয়া থেকে শুরু করে সরবরাহের ক্ষেত্রে সাপোর্ট দিয়ে আসছে আইএসআই। ভারতের মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের কাছে এমনই রিপোর্ট এসে পৌঁছেছে। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছে। কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে একাধিক কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্র। তার পাল্টা হিসেবে ভারতে জালনোট আগের চেয়ে আরও বেশি করে ছড়িয়ে অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে চাইছে পাকিস্তান। তাদের এই সাধ পূরণে অন্যতম শরিক ডি কোম্পানি।
ভারতে
জালনোট ছড়ানো পাকিস্তানের বহু পুরনো কৌশল। একদা প্রচুর পরিমাণ নকল নোট
ছাপাত তারা। নিরাপত্তার বলয়ে থাকা পেশোয়ারের একটি প্রেসএই কাজে নির্দিষ্ট
ছিল গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছিল।জালনোট ছাপিয়ে ধাপে ধাপে ভারতের
বাজারে ছড়িয়ে দিত পাকিস্তান। এই কাজটি করত মূলত সে দেশের জঙ্গিরা। ভারতীয়
অর্থনীতিতে জালনোটের কুপ্রভাব আঁচ করেই ২০১৬ সালে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট
বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
বাজারে নিয়ে আসে নয়া সুরক্ষা বিশিষ্ট নতুন পাঁচশো ও দু’হাজার টাকার নোট।
তাতে বেশ বেকায়দায় পড়ে যায় পাকিস্তান। জালনোট তৈরির ছাপাখানাটিও বন্ধ করে
দেয় তারা। ফলস্বরূপপাক- অর্থনীতিতেও জোর ধাক্কা লাগে। ভারতে নোটবন্দির পর
পাকিস্তানের ফরেক্স রিজার্ভের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পতন দেখা যায়। মুদ্রা
বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, পাকিস্তানের ফরেক্স রিজার্ভের তীব্র পতন হয় ওই বছর।
কারণ, ভারতে জালনোট পাঠিয়ে পাকিস্তান ভালো মুনাফা করত।সেই মুনাফা
রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায়।কিন্তু,জালনোট কারবারে কীভাবে লাভবান হয়
পাকিস্তান? গোয়েন্দা আধিকারিকদের দাবি, পাকিস্তান আসলে এই জালনোট ভারতে
পাঠাত। ভারতের আসল নোটের সঙ্গে বিনিময় করত। সেই অর্থ ব্যবহার করে
সন্ত্রাসবাদী বিভিন্ন সংগঠনের তহবিল সংগ্রহ করত। ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপ
বিস্তারে সেই তহবিল ব্যবহার করা হতো। অবশিষ্ট অর্থে ডলার কিনত। তার একটা
অংশ জমা করা হতো ফরেক্স রিজার্ভে। এবারও ঠিক সেই কৌশলটাই নিয়েছে
পাকিস্তান।
ডি কোম্পানি ছাপাখানা খুলে নোট তৈরি করছে। জানা গিয়েছে, গত মাসেই ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ভারতীয় জালনোট ডেলিভারি দেওয়ার জন্য ছাপিয়ে ফেলেছে তারা। দু’শো এবং পাঁচশো টাকার জালনোটের ওই কনসাইনমেন্ট তারা ভারতে পাঠাতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে লাগাতার জালনোট ঢুকছে। গত এক সপ্তাহে মুর্শিদাবাদ ও মালদার পুলিস বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে লক্ষ লক্ষ টাকার জালনোট উদ্ধার করেছে। কিন্তু বাকি এই বিপুল পরিমাণ নোট কোথায় গেল, তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। এই নোট ভারতীয় বাজারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই বাজেয়াপ্ত করতে মরিয়া পুলিস ও বিএসএফ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন