
নয়াদিল্লি: নির্দেশ অমান্য করায় খোদ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদান বন্ধ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সুদূর মার্কিন মুলুকে এমন ঘটনা নতুন হলেও, নরেন্দ্র মোদির ভারতে এমনটা বহু বছর ধরেই চলে আসছে। বিজেপির ‘অ্যালার্জিতে’ পাঠ্যক্রম থেকে বাদ পড়েছে মুঘল ইতিহাস! সম্প্রতি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দির অধ্যাপক অপূর্বানন্দ অভিযোগ করেছেন, বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তাঁর ছুটি মঞ্জুর করেনি কর্তৃপক্ষ। সম্ভবত তাঁর অপরাধ, বিতর্কিত স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান কুণাল কামরার ‘পডকাস্টে’ অংশ নেওয়া! এই পরিস্থিতিতে সামনে এল এক আন্তর্জাতিক রিপোর্ট—মোদির শাসনে শিক্ষাক্ষেত্রেও স্বাধীনতা নেই। শিক্ষক-শিক্ষিকারা কী পড়াতে পারবেন, কী পারবেন না, গবেষণার বিষয় কেমন হবে— সব কিছুতে ফরমান জারি হচ্ছে। তার সুবাদেই ২০২৫ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার সূচকে (অ্যাকাডেমিক ফ্রিডম ইনডেক্স বা এএফআই) একেবারে শেষের সারিতে ভারত। ১৭৯টি দেশের মধ্যে ১৫৬তম স্থানে। অন্তিম ১০ থেকে ২০ শতাংশের সারণিতে ঠাঁই হল ভারতের। ভি-ডেম ইনস্টিটিউট প্রকাশিত আন্তর্জাতিক রিপোর্টে ২০২২ সালে ভারতের স্কোর ছিল ০.৩৮ শতাংশ। চলতি বছরে তা আরও কমে ০.১৬।
কোন
দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরিবেশ কতটা, তা সাধারণত জরিপ করা হয় বেশ
কিছু ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে। সেগুলি হল, পাঠদান ও গবেষণার কাজে স্বাধীনতা,
অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ, প্রাতিষ্ঠানিক স্বশাসন, ক্যাম্পাসে স্বাধীনতার
পরিবেশ, শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা। কিন্তু
শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরিসর এভাবে নিম্নমুখী হওয়ার কারণ কী? রিপোর্টে
বলা হয়েছে, বহুত্ববাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির (অ্যান্টি-প্লুরালিস্ট
পার্টি) নির্বাচনী সাফল্যই শিক্ষার জগতে স্বাধীনতার পরিসর সংকীর্ণ হওয়ার
সম্ভাব্য কারণ। বিগত ৫০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, গণতান্ত্রিক
প্রক্রিয়ার প্রতি বহুত্ববাদ বিরোধী দলগুলির দায়বদ্ধতার অভাব থাকে।
রাজনৈতিক বিরোধী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার তারা খর্ব করে। ফলে এই দলগুলির
শাসনে তথ্য ও বাক স্বাধীনতাই নয়, শিক্ষাক্ষেত্রের স্বাধীনতাও বিপন্ন।
রিপোর্টে
এমন ৩৪টি দেশ ও অঞ্চলকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে গত ১০ বছরে
শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরিবেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবে নিম্নমুখী। সেই
তালিকাতেই রয়েছে ভারত। অর্থাৎ মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের
শাসনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে বলেই স্পষ্ট ইঙ্গিত।
প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচারেও ভারতের অবস্থান মোটেও
স্বস্তিজনক নয়। সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্সকারী শেষ ১০-২০ শতাংশের তালিকায়
রয়েছে ভারত, চীন ও বাংলাদেশ। ভারতের স্থান হয়েছে বাংলাদেশেরও নীচে। শুধু
তাই নয়, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটান রয়েছে প্রথম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের তালিকায়।
শ্রীলঙ্কা তারও উপরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন