মালদা: পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন। তার মধ্যে মালদা, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার নাম আসে সবার আগে। প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল মালদার গৌড়। পরবর্তীকালে মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়। পলাশির প্রান্তরে লর্ড ক্লাইভের হাতে সিরাজদৌল্লার পরাজয়ের আগে পর্যন্ত সেই রাজধানী বহাল ছিল। সেই ইতিহাস বিশ্ববাসীর নজরে আনতে উদ্যোগী হন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি মালদা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, মালদা, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া নিয়ে নতুন এক ট্যুরিজম সার্কিট তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তাঁর এই ঘোষণা আশা জাগিয়েছিল জেলাবাসীর মনে। কিন্তু বাস্তবে ওই ট্যুরিজম সার্কিট অনেকবার হওয়ার কথা থাকলেও, তা বাস্তবে রূপ পায়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বুধবার নবান্নের তরফে জেলাশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই বার্তা পেয়েই জেলাশাসক তড়িঘড়ি এগিয়ে একটি বৈঠক ডাকেন শুক্রবার।
হাজরা জেলার প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স হলে সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কর্তারা। ছিলেন মালদা হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধিরাও।
জেলাশাসক নিতিন সিংহানিয়া বলেন, মূলত ভিজিটিং ট্যুরিজম কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছিল। এই জেলায় যেসব পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে বা যেখানে আরও কিছু এমন কেন্দ্র তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখানে গৌড়, আদিনা আর জগজীবনপুরের ইতিহাস তো আছেই। তার সঙ্গে এই জেলায় আম ও রেশম নির্ভর পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে। এনিয়েও আলোচনা হয়েছে। মালদা কেন্দ্রিক ট্যুরিজম নিয়ে আমরা কীভাবে আরও প্রসার করতে পারি সেটা দেখা হচ্ছে। এর জন্য কিছু টাইম লাইন দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে পর্যটন-পরিকাঠামোর সংস্কার করতে হবে। নতুন পরিকাঠামোও গড়ে তুলতে হবে। এর মধ্যে কমিউনিটি টয়লেট তৈরি থেকে শুরু করে পানীয় জলের ব্যবস্থা, আলো, পর্যটকদের নিরাপত্তা, থাকার ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করি, বৈঠকে যা যা আলোচনা হয়েছে, সেসব দ্রুত রূপায়ণ করা হবে।
মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মালদা সফরে এসে মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া নিয়ে নয়া ট্যুরিজম সার্কিট গড়ার যে নির্দেশ দিয়েছেন, তারই অঙ্গ হিসাবে মালদার সমস্ত ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য সহ আম ও রেশমকে পর্যটন শিল্পে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, মার্চ মাসের মধ্যেই এই সার্কিটকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হবে। এর ফলে জেলার প্রচুর বেকার যুবক-যুবতী এই পেশায় জড়িয়ে উপার্জন করতে পারবে। তারা কাজ পাবে। একইসঙ্গে পর্যটন শিল্পকে উন্নতি করে জেলার অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। এর জন্য জেলাশাসক যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার জন্য সংগঠনের তরফে আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন