কলকাতা: তৃণমূল নেতার দাদাগিরি। তার জেরে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে ৪৬ রুটের বাস মালিকদের মধ্যে। ৪৬ রুট বলতে তার মধ্যে পড়ে ৪৬, ৪৬-এ এবং ৪৬-বি রুটের বাস। এই অসন্তোষ এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে এরফলে আগামী তিনদিন এই রুটে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন বাস মালিকেরা। এই সিদ্ধান্তের জেরে রীতিমতো ভোগান্তির মুখে পড়তে চলেছেন যাত্রীরা তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কারণ, এই রুটের বাসগুলো চলে মূলত, বিমানবন্দর থেকে বাগুইআটি, কেষ্টপুর, চিনারপার্ক এবং কাঁকুড়গাছি, কলেজ স্ট্রিট হয়ে ধর্মতলা পর্যন্ত। উল্টোডাঙা থেকে চিনার পার্ক যেতে চাইলে আমজনতার মূল ভরসা এই বাসগুলোই। তথ্য বলছে, দিনে কমপক্ষে কয়েক হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন এই রুটে। ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই তিনদিনের জন্য বাস পরিষেবা বন্ধ থাকায় চরম সমস্যা মুখে পড়বেন নিত্যযাত্রীরা। হঠাৎ এই বাস রুট বন্ধের সিদ্ধান্তে র পেছনে রয়েছে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার দাদাগিরি, অন্তত এমনটাই অভিযোগ। কারণ, তৃণমূলের এই নেতা নাকি তৃণমূলের নামে ভয় দেখিয়ে বাস চালক থেকে শুরু করে কন্ডাক্টর এবং বাস মালিকদের, ভয় দেখাতেই তিনি তোলাবাজি ও নানারকম কর্মকা-এ জড়িত থাকেন, সঙ্গে চলে তোলাবাজিও, এমনটাই অভিযোগ ৪৬ রুটের বাস মালিকদের। এই ঘটনা প্রসঙ্গে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘এই ট্র্যাডিশন চলে আসছে বামেদের সময় থেকেও। বামেদের সময়েও বাস ইউনিয়ন পরিচালনা করতেন বাম নেতাদের একাংশ। সেখানেও ছিল তাঁদের দাদাগিরি। এরপর তৃণমূলের জামানাতেও সেই ছবি এতটুকুও বদলায়নি। অর্থাৎ, ট্র্যাডিশন অব্যাহত। বাস ইউনিয়ন বলতে সেখানে বাস মালিকদের কোনও কথাই কাজে লাগে না। শাসকদের নেতারা বাস মালিকদের ওপর রোলার চালান। আর সেই রোলারে পিষ্ট হতে হয় মালিক কর্মীদের। ‘এঁরাই রেশ ধরে তিনি এও জানান, ‘বাসে কে কখন ডিউটি করবে তা ঠিক করেন এই শাসকদের নেতারা। এদিকে অনেক রুট রয়েছে সেখানে বাস কন্ডাক্টর থেকে শুরু করে চালকেরা স্থানীয় নন। ফলে তাঁদের ওই বাসেই রাত কাটাতে হয়। বা স্থানীয় এলাকাতেই মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করতে হয়। সেখানে স্থানীয় শাসকদের নেতাদের চটিয়ে কোনটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না মনে করেই কোনও প্রতিবাদও করা হয় না। এর সঙ্গে রয়েছে নানা আছিল্যা টাকা তোলার ঘটনাও। এরপর এই টাকা এক বড় অঙ্কে গিয়ে দাঁড়ালে সেটা নিয়ে শুরু হয় রাজনীতি। এই রকমই ঘটনা ঘটেছে ৪৬ রুটেও। আর এই ঘটনা শুধু ৪৬-এর রুটেই নয়, সারা বাংলা জুড়ে চলছে এই একই ছবি।’ আর কোনও ট্রেড শাসকের তরফে থেকে এই রোলার চালিয়ে পেহাই করা হয় মালিকদের। সেই ট্রেড যে বেআইনি থাকতে পারে না সে ব্যাপারেও হুঁশিয়ারির বার্তাও দিতে শোনা যায় জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদককে। এদিকে এই ঘটনার প্রসংসে এক বাস মালিক সংগঠনের নেতা টিটু সাহা শুক্রবার সন্ধেয় জানান, ‘যে ঘটনাটি ঘটে থাকুক না কেন, বাস পরিষেবা অব্যাহত রাখতে হবে। দাবি-দাওয়া থাকছে, থাকবে, কিন্তু বাস বন্ধ করলে সাধারণ মানুষ অসুবিধায় পড়বে।’ তবে সময় উত্তর দেবে ঠিক কোন দিকে পাল্লা ঝুঁকতে চলেছে বাস পরিষেবা বন্ধ রাখার এই সিদ্ধান্তের। তার ওপর নির্ভর করবে কলকাতার একাংশের পরবর্তী তিনদিনের ভোগান্তির ছবি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন