কলকাতা: রাজ্যে শিল্প বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় প্রশাসনিক টালবাহানা বরদাস্ত করা হবে না বলে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মাসে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের পর সোমবার প্রথম নবান্ন সভাঘরে শিল্প সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটির সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, শিল্পের অনুমোদন দেওয়ার জন্য কোনও কাজ ফেলে রাখা যাবে না। কেউ যদি এই কাজে অবহেলা করেন বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই কাজ না করেন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, মানুষের কল্যাণে সরকারের গৃহীত প্রকল্পের জন্য কোনও টাকা নেওয়া যাবে না। কলকাতার লেদার কমপ্লেক্স-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিউটেশন দেওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়েই কাজ করতে হবে বলে তিনি জানান। এই কাজ করার জন্য অনেক জায়গায় টাকার লেনদেন হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ধরনের লেনদেন বন্ধ করার দিকেও জোর দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন রাজ্যে অনেক শিল্পপতি বিনিয়োগ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। রাজ্য জুড়েই বিভিন্ন জেলায় এই শিল্প স্থাপন এবং বিনিয়োগের কাজ চলছে। এর ফলে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর, বীরভূমে দেউচা প্রকল্প-সহ বিভিন্ন বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক কর্মসংস্থান হবে। এইসব বিনিয়োগে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাণিজ্য সম্মেলন থেকে আসা বিনিয়োগ প্রস্তাবের মধ্যে ইতমধ্যে একহাজারের বেশি প্রকল্পকে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এদিনের মঞ্চ থেকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্তাদের উদ্দেশে নয়া ডেডলাইনও বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, 'সব ডিপার্টমেন্টে জমি পড়ে রয়েছে। অনেকে খোঁজও রাখেন না। প্রত্যেক বিভাগকে বলব, তাদের কোথায় কত জমি পড়ে রয়েছে, যেগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে, আগামী ৭ দিনের মধ্যে আমাদের জানাতে হবে হবে। যে না পাঠাবেন তাঁর সেই দপ্তরে থাকার অধিকার নেই।' সমন্বয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে রাজ্য স্তরের শিল্প সমন্বয় কমিটির পোর্টালেরও এদিন উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। পোর্টালের সাহায্যে রাজ্যের শিল্পায়নের জন্য সরকারের কোথায় কত জমি রয়েছে, কে বা কারা সেখানে শিল্প স্থাপনের জন্য আবেদন করছেন, প্রকল্পের কাজ কতদূর এগোল-সহ শিল্প সংক্রান্ত সব তথ্যই জানা যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'মেধা থেকে দক্ষতা, বাংলা সবদিক থেকে এগিয়ে। অথচ গড়িমসির জন্য অনেক সময় অনেক প্রজেক্ট দেরি হয়ে যায়। এ জিনিস আর সহ্য করা হবে না। কোথায় আটকে রয়েছে, কী কারণ আটকে রয়েছে এগুলো দেখতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে হবে। গড়িমসির জন্য বাংলার ভবিষ্যত যেন নষ্ট না হয়। সেজন্যই এই পোর্টাল।' কাজে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্যস্তরে গঠিত শিল্প সংক্রান্ত কমিটকে নিয়ে চারদিন অন্তর বৈঠকে বসবেন মুখ্যসচিব। একইভাবে জেলায় জেলাশাসকদের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'শুধুই কলকাতা কেন্দ্রিক শিল্প হলে তো হবে না, জেলাতেও আমাদের প্রচুর জমি রয়েছে। আইটি টু ক্ষুদ্র শিল্প- সব ক্ষেত্রেই বাংলা স্কিল এবং মেধায় সেরা। মনে রাখবেন, একটা বড় কারখানা হলে ১ থেকে দেড় হাজার চাকরি হতে পারে। কিন্তু ছোট ছোট কারখানা হলে লক্ষ লক্ষ চাকরি হতে পারে।' এবারের বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন থেকে বাংলায় শিল্প স্থাপনে ৪ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার প্রস্তাব এসেছে। এর আগে ১৯ লক্ষ কোটি টাকার শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে প্রস্তাব এসেছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন