নয়াদিল্লি: ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের প্রচারে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বছরে ২ কোটি চাকরির দাবিও করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ১৫ লক্ষ টাকা কোনও সাধারণ ভোটারের অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। আর বছরে ২ কোটি চাকরি? বিজেপির রাজ্যসভার সদস্য ব্রিজ লালের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার বসেছিল ‘পার্সোনেল, পাবলিক গ্রিভান্স এবং আইন ও বিচারবিভাগীয়’ সংসদীয় কমিটির বৈঠক। বিষয় ছিল, ‘ফিলিং আপ অব ভ্যাকান্সিজ ইন দ্য সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট।’ সেখানেই ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি) এবং স্টাফ সিলেকশন কমিশন তথ্য দিয়ে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদির ১০ বছরে মোট নিয়োগ হয়েছে মাত্র ১১ লক্ষ ৯৪ হাজার ২৭৫। এর মধ্যে রেলেই চাকরি হয়েছে ৫ লক্ষ ৮ হাজার ৬৯৯ জনের। বৈঠকে ডিওপিটি’র সচিব রচনা শাহ এবং এসএসি’র চেয়ারম্যান রাকেশ রঞ্জন সহ বেশ কয়েকজন আধিকারিক হাজির ছিলেন। প্রাথমিকভাবে অবশ্য তাঁরা ২২ লক্ষ চাকরির দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু এই পরিসংখ্যান যে স্রেফ তথ্যের ‘জাগলারি’, তা বৈঠক এগতেই প্রকাশ্যে চলে আসে। কারণ, পদোন্নতিকেও তাঁরা নিয়োগের তালিকায় দেখিয়ে দিয়েছিলেন। সরকারি কর্তাদের পরিসংখ্যান ছিল, ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত পর্যন্ত রেলওয়ে, ইউপিএসসি এবং স্টাফ সিলেকশন কমিশনের মাধ্যমে ১১ লক্ষ ৯৪ হাজার ২৭৫ জনের চাকরি তো হয়েছেই। পাশাপাশি, খালি থাকা বাকি পদে পদোন্নতির মাধ্যমে ‘নিয়োগ হয়েছে’ ৭ লক্ষ ৮০ হাজার ৪১ জনের। তাও সেটি ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৫’এর মার্চ পর্যন্ত। এছাড়া এখন দু’লক্ষ পদে নিয়োগের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই দাবি শুনেই ডিএমকে’র পি উইলসন, তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়ের মতো সাংসদরা সরকারকে চেপে ধরেন। সূত্রের খবর, তাঁরা সরকারি কর্তাদের কাছে জানতে চান, পদোন্নতির নিয়োগকে কীভাবে নতুন চাকরি বলে গোনা হচ্ছে? তাছাড়া পদোন্নতির হিসেব স্রেফ গত তিন বছরের। তাহলে কি তার আগে আট বছরে কোনও পদোন্নতি হয়নি? সাংসদদের আরও প্রশ্ন ছিল, কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি পাওয়ার যোগ্য এমন বেকার প্রার্থী ২০১৪ সালে দেশে কতজন ছিলেন? আর এখনই বা কত?
এই হিসেব অবশ্য স্পষ্ট করতে পারেনি কেন্দ্র। তারা ‘রোজগার মেলা’র মতো ফানুসই বারবার ফুলিয়ে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৬ বার হয়েছে এই রোজগার মেলা। আর তাতে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের হাতে স্রেফ নিয়োগপত্র তুলে দিয়েই নাটকীয় কর্মসূচি পালন হয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। আসল চিত্রটা হল, প্রতি বছর নিঃশব্দে বেড়ে গিয়েছে বেকারত্ব। উদ্বেগের মেঘ বেড়েছে মধ্যবিত্তের জীবনে। এখানেই শেষ নয়। তফশিলি জাতি ও উপজাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদ চুপিসাড়ে বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে বলেও বৈঠকে অভিযোগ করেছেন বিরোধী সাংসদরা। তাঁদের দাবি, যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ওই পদগুলি ‘জেনারেল’ করে দেওয়া হচ্ছে। কেন? একের পর এক এমন প্রশ্নের মুখে পড়ে সরকারি আধিকারিকরা থতমত খেয়ে যান। পরিস্থিতি ম্যানেজ করতে কমিটির চেয়ারম্যান তাঁদের জানিয়ে দেন, পরের বৈঠকে লিখিত জবাব দেবেন। তাতে অবশ্য বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি প্রশ্নের মুখ থেকে বাঁচেননি। বিরোধীরা সাফ অভিযোগ করেছেন, নরেন্দ্র মোদির আশ্বাস মতো ১১ বছরে ২২ কোটি চাকরি হওয়ার কথা ছিল। সরকারি তথ্যের ‘জাগলারি’ মেনে নিলেও সংখ্যাটা ২২ লক্ষ। এটাও মেনে নিতে হবে? এটাই ‘আচ্ছে দিন’?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন