কলকাতা: সরকারি অফিসে ছুটতে হবে না কাউকে। বরং সরকারি কর্মী-আধিকারিকরাই পৌঁছে যাবেন মানুষের কাছে। রাজ্য পরিচালনার এই জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই কখনও ‘পাড়ায় সমাধান’, কখনও ‘দুয়ারে সরকার’-এর মতো সাড়া জাগানো ও সফল প্রকল্প এনেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় এবার রাজ্য সরকারের আরও এক জনমুখী কর্মসূচি ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২ আগস্ট থেকে রাজ্যজুড়ে চালু হতে চলেছে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি। এর আওতায় রাজ্যের ৮০ হাজার বুথের বাসিন্দাদের একেবারে ছোটোখাটো সমস্যার সমাধান করা হবে দ্রুত। মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, এই কাজের জন্য রাজ্যের কোষাগার থেকে সামগ্রিকভাবে খরচ হবে আট হাজার কোটি টাকা। বুথ পিছু বরাদ্দ হবে ১০ লক্ষ টাকা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কোন কাজের জন্য এবং কীভাবে এই ১০ লক্ষ টাকা খরচ হবে, তা সংশ্লিষ্ট বুথের বাসিন্দরাই একজোট হয়ে ঠিক করবেন। এমন উদ্যোগ দেশের আর কোনও রাজ্য এখনও পর্যন্ত নিতে পারেনি বলেও জানিয়েছেন মমতা।
কীভাবে চলবে এই কর্মসূচি? কোন ধরনের সমস্যার সমাধান হবে? মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পাড়ার রাস্তা, নলকূপ বা বিদ্যুতের সমস্যা থেকে শুরু করে স্কুলবাড়ি, আইসিডিএস কেন্দ্রের ছাদ মেরামতির মতো ছোট ছোট সমস্যার সমাধান হবে। পাশাপাশি অবস্থিত তিনটি বুথ এলাকার বাসিন্দাদের জন্য একটি করে শিবির করা হবে। সারাদিন সেখানে হাজির থাকবেন সরকারি আধিকারিকরা। তাঁরা মানুষের সমস্যার কথা সরাসরি শুনবেন। সমাধান হবে চটজলদি। রাজ্যজুড়ে এই কর্মসূচি চলবে দু’মাস ধরে। তবে পুজোর সময় ১৫ দিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। যাবতীয় পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে রূপায়িত করতে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের নেতৃত্বে রাজ্য স্তরে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। জেলা স্তরেও থাকবে টাস্ক ফোর্স। ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’-এর ক্যাম্পে থাকবে ‘দুয়ারে সরকার’-এর ডেস্কও। তবে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের নতুন উপভোক্তাদের সুবিধা প্রদান সহ আগের ‘দুয়ারে সরকার’-এর যে ১০ শতাংশ পরিষেবা প্রদান বাকি রয়েছে, তা ডিসেম্বর মাস থেকে দেওয়া শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।
এদিন আরও একবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে রাজ্যের পাওনা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটিতে। সাধারণ মানুষের স্বার্থে রাজ্যের কোষাগার থেকে অর্থ খরচ করেই আমাদের নানা প্রকল্প নিতে হচ্ছে।’ ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পের টাকা না দেওয়া নিয়েও এদিন সুর সপ্তমে তোলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘গত নির্বাচনেও জল জীবন মিশন নিয়ে বিজেপি মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে। ওরা টাকা দেওয়া বন্ধ রাখায় অনেক জায়গায় পাইপ পেতে দেওয়ার পরও পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন