তমলুক: পড়ুয়ার অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে নেশার আসর বসাচ্ছে মদ্যপরা। তমলুক ব্লকের পিপুলবেড়িয়া-২পঞ্চায়েত অফিস লাগোয়া গোবিন্দপুর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র এবছর থেকেই পড়ুয়ার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একসময় ৮০জন পড়ুয়া পড়াশোনা করত। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অনুমোদন সত্ত্বেও দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন হতো। অন্য স্কুলের নামে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিত। চলতি বছরে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে ১৮জনে নেমে আসে। তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ নবম, দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরই ১৮জন ছাত্রছাত্রীকে অভিভাবকরা অন্যত্র স্থানান্তর করে নেন। যেকারণে পড়ুয়াশূন্য হয় এই স্কুল। এখানকার চারজন শিক্ষককে নকিবসান মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে বদলি করে দেওয়া হয়।
পাঁশকুড়া-দীঘা রেললাইনের ধারেই রয়েছে গোবিন্দপুর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র। এখানেই রয়েছে পিপুলবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত অফিস, গোবিন্দপুর সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গোবিন্দপুর প্রাইমারি স্কুল। রেললাইন বরাবর ক্যানেলের ধার ঘেঁষা এই স্কুলবিল্ডিং দীর্ঘদিন ধরেই দুষ্কৃতীদের পছন্দের জায়গা। স্কুল চলার সময়ও ভবনের চারপাশে মদের বোতল, প্লাস্টিকের গ্লাস পড়ে থাকত। গত জানুয়ারি মাস থেকেই পঠনপাঠন বন্ধ। দোতলা স্কুল ভবনে মোট ছ’টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। একসময় পড়ুয়ারা বসার জায়গা পেত না। তাই আইওসির পক্ষ থেকে সিএসআর স্কিমে এখানে স্কুল ভবন বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ, এখন ভবন পড়ে নষ্ট হলেও পড়ুয়া নেই। বুধবার ওই স্কুল ভবনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক হাজার প্লাস্টিকের গ্লাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। এখানকার মুখ্য সম্প্রসারক হিসেবে দায়িত্বে থাকা হরিসাধন মাইতি বলেন, স্কুল পুরোদমে চলাকালীন সন্ধ্যার পর মদের আসর বসত। আমরা নানা অসুবিধায় পড়তাম। এখন স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই ভবন মদ্যপদের একেবারে স্বর্গরাজ্য। রেলপাড়ের ধারে এই ভবনের বিরাট বারান্দাজুড়ে মদের আসর বসে। অনেক রাত পর্যন্ত তাদের দখলেই থাকে ২৩বছরের পুরনো এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বুধবার লাগোয়া গোবিন্দপুর প্রাইমারি স্কুলে অভিভাবক মিটিং ছিল। সেই মিটিংয়ে আসা রত্না সামন্ত, বাদল বেরা প্রমুখ বলেন, গোবিন্দপুর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে চারজন শিক্ষক ছিলেন। একজন অবসর নেওয়ার পর তিনজন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতেন। একসময় ৮০জন পড়ুয়া পড়াশোনা করত। কিন্তু, ধীরে ধীরে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে শুরু করে। এবছর একেবারে পড়ুয়ার কমে যাওয়া ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা পড়ে। তারপর ভবনটি এখন পুরোপুরি মদ্যপদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে।
মুখ্য সম্প্রসারক হরিসাধনবাবু বলেন, আমরা অভিভাবকদের দাবি মেনে এখানে নবম, দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতাম। এজন্য গেস্টটিচার নিয়োগ করে নিজেরাই মাইনে দিতাম। কিন্তু, ধারাবাহিকভাবে পড়ুয়া কমে যাওয়ায় আর নবম, দশম শ্রেণি চালু রাখা সম্ভব হয়নি। আমরা ওই দুই ক্লাস তুলে দেওয়ামাত্র টিসি নিয়ে সকল পড়ুয়াকে অন্যত্র নিয়ে চলে যান অভিভাবকরা। সেইসঙ্গে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা পড়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন