মালদহ: বাল্য বিবাহ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আপসহীন মনোভাব দেখাচ্ছে মালদহ জেলা প্রশাসন ও শিশুসুরক্ষা দপ্তর। এবার কার্যত বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত সংবাদ আগেভাগে পেতে জেলাজুড়ে সোর্স ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোথাও নাবালিকা বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের কথাবার্তা শুরু হয়েছে জানতে পারলেই সোর্সরা সেই তথ্য নজরে আনবে চাইল্ড লাইন, পুলিস অথবা শিশুসুরক্ষা দপ্তরের। লক্ষ্য একটাই, বিয়ের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শুরুতেই রুখে দেওয়া। পাশাপাশি, যে পরিবারগুলি এই বিয়ের আয়োজন করছে, তাদেরও খানিকটা উপকার হবে বলেও মনে করছে শিশুসুরক্ষা দপ্তর। কারণ, বিয়ের আয়োজন করতে অনেক টাকা খরচ করে দুই পরিবার। কিন্তু বিয়ের দিন বা তার ঠিক আগে সব আয়োজন হয়ে যাওয়ার পর অভিযান চালিয়ে বন্ধ করলে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতি হয়। বিয়ে ঠিক হওয়ার পরপর যদি আটকানো যায়, তাহলে সেই আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন অভিভাবকরা।
জেলা শিশুসুরক্ষা আধিকারিক শিবেন্দুশেখর জানা বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিভিন্ন মহল থেকে এই ধরনের বিয়ের কথা জানতে পারলেই আমরা দ্রুত পদক্ষেপ করে রুখে দিচ্ছি। তবে, এই ধরনের একটি বিয়ের প্রস্তুতির খবরও যাতে আমাদের অগোচরে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে মাইক্রোস্তরে সোর্স ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত কথাবার্তা শুরু হলেই সোর্সরা বিষয়টি আমাদের জানাবেন। দেরি না করে সবদিক জেনে পদক্ষেপ শুরু করব।শিবেন্দুশেখর যোগ করেন, কিছু ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ দেওয়া পরিবারগুলির আর্থিক অবস্থা বেশ খারাপ। বিয়ের আয়োজনও সেরে ফেলেন তাঁরা। ফলে আমরা যখন ওই বিয়ে রুখে দিই, তখন তাঁদের অযথা ব্যয় হয়ে যায়। আমরা বিয়ে শুরুতেই রুখে দিলে তাঁরা আর আয়োজন করবেন না। পরিবারগুলির খরচও বাঁচবে। কয়েকদিন আগে বাল্যবিবাহ আটকাতে পুরোহিত, মৌলবী, ডেকরেটরদের কাছে মুচলেকা নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। গাজোল ব্লক থেকে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে সব এলাকায় এই ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে কোথাও বাল্যবিবাহ হলে দায়বদ্ধ থাকবেন মুচলেকা দেওয়া ব্যক্তিরা। এদিকে রবিবার আরও বাল্যবিবাহ হওয়ার কথা ছিল ইংলিশবাজার ব্লকের মিল্কিতে। সেই বাল্যবিবাহও রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানান শিবেন্দুশেখর।তিনি বলেন, মিল্কি এলাকায় সম্প্রতি এরকম পরপর দু’টি ঘটনা ঘটল। ওই এলাকায় আমরা একটি বড় উদ্যোগ নিচ্ছি। স্কুল, পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন সবাইকে নিয়ে আমরা বিশেষ প্রচার করব ওই এলাকায়। পাশাপাশি ইংলিশবাজারের বুধিয়া এলাকাতেও স্কুল ও মাদ্রাসার পড়ুয়াদের নিয়ে এই বিশেষ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন জেলা শিশুসুরক্ষা আধিকারিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন