নয়াদিল্লি: ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গে মাত্র দু’টি ভুয়ো জব কার্ড পাওয়া গিয়েছে। হ্যাঁ, দু’টি! তারপরও বাংলায় ১০০ দিনের কাজ বন্ধই। এব্যাপারে আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত পালন করার কোনও সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। অথচ ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে হাজার হাজার ভুয়ো জব কার্ডের হদিশ মিলছে। সেক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার সংসদে তৃণমূল এমপি মালা রায়ের প্রশ্নের উত্তরে নিজেদের ‘দ্বিচারিতা’ সামনে আনল খোদ মোদি সরকার। তাতেই প্রবল অস্বস্তিতে বঙ্গ বিজেপি। বছর ঘুরলে বিধানসভা ভোট। তাই ঢোঁক গিলে বঙ্গ বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যকেও বলতে হচ্ছে, ‘আমরাও চাই বাংলায় গরিবরা কাজ পান।’
সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলায় বন্ধ ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প। কিন্তু কেন? কেন্দ্রের অভিযোগ, বেহাত হয়েছে অর্থ। রয়েছে জাল জব কার্ড। কিন্তু কত ‘ফেক জব কার্ড’ রয়েছে? লোকসভায় প্রশ্ন করেছিলেন তৃণমূলের মালা রায়। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন রাষ্ট্রমন্ত্রী কমলেশ পাসওয়ান তার জবাব দিয়েছেন বটে। কিন্তু সেটিই বিজেপির কাছে হয়ে গিয়েছে ‘ব্যুমেরাং’। তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন, গত অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গে মাত্র দু’টি ফেক জব কার্ড পাওয়া গিয়েছে। আর বাকি রাজ্যে? সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গোটা দেশে গত আর্থিক বছরে ৫৮ হাজার ৮২৬টি ‘ফেক জব কার্ড’ বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে এনডিএ শাসিত অর্থাৎ ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যেই ৪২ হাজার ৭৩৮টি। নির্বাচনমুখী বিহারেই সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি। ৮ হাজার ১১১। যে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার বাংলার বাসিন্দাদের এনআরসির নোটিস পাঠাচ্ছে, সেখানেও বাতিল হয়েছে ৭ হাজার ৩৪১টি ভুয়ো জব কার্ড। যোগী-রাজ্য উত্তরপ্রদেশে সেই সংখ্যা ৩ হাজার ৪২১, মোদি-শাহের গুজরাতে ৯৮৮, স্বয়ং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের মধ্যপ্রদেশে ৮০৪। তারপরেও শুধু বাংলাকে বঞ্চনা কেন? প্রশ্ন তৃণমূলের।
বঞ্চনা বন্ধ করতে রীতিমতো আসরে নামতে হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টকে। আগামী ১ আগস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে আবার ১০০ দিনের কাজ শুরুর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রকে। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে ৩৩ দিন। এখনও সেব্যাপারে মোদি সরকারের কোনও সক্রিয়তা দেখাচ্ছে না। আদালতের নির্দেশ পালনে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে? লোকসভায় জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূলের দুই এমপি মহুয়া মৈত্র এবং সাজদা আহমেদ। জবাবে স্বয়ং গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ‘গত ১৮ জুন কলকাতা হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে কী হবে, ভেবে দেখা হচ্ছে।’
এতে আরও চাপে পড়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। সৌমিত্র খাঁ, কার্তিকচন্দ্র পালের মতো সাংসদকে পাশে রেখে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য ‘বর্তমান’কে বলেন, ‘আমরাও চাই বাংলায় মানুষ ১০০ দিনের কাজ পান। কিন্তু যে কোনও সরকারি প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্য উভয়কেই কিছু আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। তৃণমূল সরকার সেটা মানছে না বলেই কাজ বন্ধ।’ প্রত্যাশিতভাবেই এই ইস্যুতে সুর চড়িয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তিনি বলেন, কেন্দ্র শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই টাকা আটকে রেখেছে। এটা ফের প্রকাশ্যে এল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার আন্দোলনের জেরেই ধীরে ধীরে সত্য প্রকাশে বাধ্য হচ্ছে মোদি সরকার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন