কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের বিরুদ্ধে অপরাধের পরিসংখ্যান তুলে ধরতে গিয়ে আদালতে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়তে হল পুলিসকে। ২০২৩ সালে ঘটনা ঘটলেও, এতদিন ধরে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, বিচারকের এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সরকারি আইনজীবীকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনজীবীকে বলতে হয়, যা করার করা হয়েছে। মনোজিতের বিরুদ্ধে থাকা ১২টি কেসের তথ্য মঙ্গলবার আদালতে তুলে ধরা হয় পুলিসের তরফে। পাশাপাশি কসবার দুটি পুরনো মামলায় শোন অ্যারেস্ট করে এদিন তাঁকে হাজির করানো হয়। দুটি কেসেই জামিন পান এই টিএমসিপি নেতা। বিচারক পুলিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই মনোজিতের প্রভাবশালী সংস্রব প্রসঙ্গ ফের সামনে উঠে আসে। আদালত চত্বরেই আইনজীবী মহলের একাংশের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়, তাহলে কোন প্রভাবশালী তত্ত্বের জেরে আইনি প্রক্রিয়া এত বিলম্বিত হয়েছিল?
কসবা গণধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত মনোজিৎ ও তার দুই সঙ্গীর জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয় মঙ্গলবার। তাঁদের এদিন আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। মনোজিতের বিরুদ্ধে কসবা থানায় থাকা দুটি মামলায় তাঁকে শোন অ্যারেস্ট করে লালবাজার। এই দুটি মামলার মধ্যে একটিতে শ্লীলতাহানি, জোর করে আটকে রাখা, ভয় দেখানো সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ রয়েছে। আর একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ আছে। এই দুটি মামলাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। মূল মামলার শুনানি শুরু হলে মনোজিতের আইনজীবী বলেন, নির্যাতিতার ফোন বাজেয়াপ্ত ও মোবাইলের কল ডিটেইলস নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চেয়ে তিনি পিটিশন করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে জানানো হয়নি। তাঁর মক্কেল সংশোধনাগারে ঠিকমতো খাবার জল পাচ্ছেন না। পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হচ্ছে না বলে মক্কেল জানিয়েছেন। মনোজিৎকে জেলে পেন্সিল ও বই দেওয়ার আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। একইসঙ্গে তিনি মক্কেলের সঙ্গে কথা বলতে জেলে যাওয়ার আবেদন করেন। মনোজিত ও তার দুই শাগরেদের জামিনের আবেদন জানাননি তাঁদের আইনজীবীরা। ঘটনায় অভিযুক্ত কলেজের নিরাপত্তারক্ষীর জামিন চেয়ে তার আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য বলেন. মক্কেল সামান্য একজন কর্মী। এই ঘটনার সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই। কলেজের পরিচালন সমিতি কী করছিল, এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্রোপাধ্যায় বলেন, ওই নিরাপত্তারক্ষীর কাজ ছিল গণধর্ষণ আটকানো। অথচ সে গার্ড দিয়েছে গণধর্ষণ করার জন্য। তদন্ত নিরপেক্ষভাবে করা হচ্ছে। তদন্তে যা উঠে আসছে, সেটাই বলা হচ্ছে। এরপরই সরকারী আইনজীবীর তরফে মনোজিতের বিরুদ্ধে থাকা ১২টি অপরাধের পরিসংখ্যান ও এই সংক্রান্ত নথি তুলে ধরা হয় আদালতের কাছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ‘সিরিজ অব কেসেস’ রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে শ্লীলতাহানির মতো মামলাও। ঠিকঠাক শাস্তি হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতো না। এরপরই বিচারক প্রশ্ন করেন, ২০২৩’এর কেস, এতদিন রাজ্য কী করছিল? পিপি জানান, যা করার করা হয়েছে। তদন্তে অভিযুক্তরা সহযোগিতা করছেন না বলে জানানো হয় পুলিসের তরফে। দ্রুত চার্জশিট পেশ করে অভিযুক্তদের জেল হেফাজতে রেখে বিচারপর্ব চালাতে চায় সরকারপক্ষ। আজ বুধবার অভিযুক্তদের জেলে ‘গেট প্যাটার্ন’ নমুনা নেওয়ার দিন ধার্য হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন