কলকাতা: বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে এদেশে ঢোকার পর ভারতীয় বনে যাওয়া এক বাংলাদেশি নাগরিককে হন্যে হয়ে খুঁজছে লালবাজার। ওই ব্যক্তি খাস কলকাতার ঠিকানা সম্বলিত ভুয়ো নথি জমা দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছে ভারতীয় পাসপোর্ট। ইতিমধ্যে ভবানীপুর থানায় কেস রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। বেপাত্তা ওই বাংলাদেশি নাগরিক কোনও নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কি না, তা নিয়ে তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিবাসন দপ্তরও।
ভুয়ো নথি জমা দিয়ে বাংলাদেশিদের ভারতীয় পাসপোর্ট জোগাড়ের বিষয়টি মাস দশেক আগে সামনে আসে। দেখা যায়, সীমান্তের ওপার থেকে কিছু বাংলাদেশি ভারতে অনুপ্রবেশ করে কলকাতার বিভিন্ন ঠিকানায় জন্মের শংসাপত্র, ভোটার কার্ড, আধার সহ বিভিন্ন ভারতীয় নথি তৈরি করে ফেলেছে। সেই জাল নথির ভিত্তিতে ইস্যু হয়ে যাওয়া পাসপোর্টগুলি শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ‘ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস’ (এফআরআরও)। সেই সঙ্গে বিদেশিরা তাঁদের ভিসার মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও ভারতে থেকে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়েও চলছে খোঁজখবর। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্দেহভাজন ওই বাংলাদেশির নামে কোনও ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে কি না জানতে গত ছ’মাসে আরপিও থেকে ইস্যু হওয়া সমস্ত পাসপোর্টের নথি চেয়ে পাঠায় এফআরআরও।
পাসপোর্টের জন্য জমা দেওয়া নথি পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, একই আধার নম্বর দিয়ে দু’টি পাসপোর্ট বেরিয়ে গিয়েছে। আরও দেখা যায়, আধার নম্বর এক হলেও ভিন্ন ভিন্ন লোকের ছবি রয়েছে তাতে। তার মধ্যে একটি ওই বাংলাদেশি নাগরিকের। পূর্ব কলকাতার একটি ঠিকানায় ইস্যু করা হয়েছে জন্মের শংসাপত্র। বার্থ সার্টিফিকেটের তথ্য যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, ওই ব্যক্তির এখানে জন্মই হয়নি। ভুয়ো বার্থ সার্টিফেকেট দিয়ে প্যান, আধার তৈরি করে তা জমা দেওয়া হয়েছে পাসপোর্ট অফিসে। এরপর এফআরআরও’র তরফে ভবানীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। তার ভিত্তিতে পুলিস জালিয়াতি, প্রতারণা সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে।
তদন্তে জানা যায়, ওই বাংলাদেশি বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই ভারতে ঢুকেছিল। সেই পাসপোর্ট দেখিয়ে সে কলকাতায় একটি বাড়ি ভাড়া নেয়। কিছুদিন পর দালাল ধরে সে ভারতীয় আধার, প্যান, বার্থ সার্টিফিকেট ও ভোটার কার্ড তৈরি করে ফেলে। এরপর দালালের মাধ্যমেই ওই নথি জমা করে ভারতীয় পাসপোর্ট বানিয়ে ফেলে। চলতি বছরের শুরুতে পাসপোর্ট হয়ে যাওয়ার পর থেকেই সে বেপাত্তা। কলকাতার যে ঠিকানা পাসপোর্টে দেখানো হয়েছে, সেখানে তার সন্ধান মেলেনি। তদন্তকারীরা জেনেছেন, পোস্ট অফিসকে ‘ম্যানেজ’ করে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে দালাল। তারপর তা পৌঁছে গিয়েছে ওই বাংলাদেশির হাতে। বাংলাদেশে সক্রিয় কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর স্লিপার সেলের সঙ্গে তার যোগ রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছে লালবাজার। তার পাসপোর্টের জন্য আবেদনের নথি এবং এনওসি দিয়েছিলেন কোন অফিসার, তাও জানার চেষ্টা চলছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন