কলকাতা: শেষবার টাকা এসেছিল ২০২২ সালের ৯ মার্চ। তারপর থেকে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে একটি টাকাও দেয়নি মোদি সরকার। সেটাও মাত্র ৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগকে ঢাল করে। এমনকী মনরেগা আইনের ২৭ নম্বর ধারা আরোপ করে বকেয়া অর্থ থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রতিটি অর্থবর্ষের শ্রমদিবস বরাদ্দ পর্যন্ত কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। ২০২২ থেকে ২০২৫—এই তিন বছর দু’মাসে বাংলাকে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। অবশেষে বুধবার মিলেছে ‘ন্যায়বিচার’। মোদি সরকারকে আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলায় ১০০ দিনের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তারপরেই এই চার বছরের মোট বকেয়া মেটানোর দাবিতে সুর সপ্তমে তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা আজকের রায়ের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, আগের বকেয়া অর্থের কী হবে? যাঁরা ১০০ দিনের কাজ করেছেন, তাঁদের বিপুল পরিমাণ মজুরি বকেয়া। চার বছর ধরে তার একটা পয়সাও দেওয়া হয়নি। সেই টাকাটা আগে দিন। গত প্রায় সাড়ে ৩ বছরের প্রকল্প চালানোর টাকাটারই বা কী হবে? কেন্দ্রের এরিয়ার দেওয়া উচিত। আমাদের টাকা অন্য রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে। এটা ক্রিমিনাল অফেন্স নয়? যেদিন থেকে প্রকল্পটি বন্ধ হয়েছে, সেদিন থেকে টাকাটা আমাদের প্রাপ্য। কারণ, আমরা কাজ চালিয়ে গিয়েছি।’
কেন্দ্র টাকা বন্ধ করে দেওয়ায়, বাংলায় ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। এর মাধ্যমে ৮২ কোটি ৩৩ লক্ষ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। মজুরি দেওয়া হয়েছে ১৬ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, ‘কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে প্রান্তিক মানুষের ন্যায্য প্রাপ্য মেটায়নি। শেষপর্যন্ত রাজ্যের মানবিক সরকার সেই বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছে।’ ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলারই টাকা বন্ধ করেছিল মোদি সরকার। অথচ ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে এই প্রকল্পে ব্যাপক হারে আর্থিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়লেও কেন্দ্র চোখে ঠুলি গুঁজে থেকেছে। এতেই আরও জোরালো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর তোলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ। কেন্দ্রের দ্বিচারিতার প্রতিবাদে কলকাতার রেড রোড থেকে রাজধানীর রাজপথে ধর্না দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সাংসদ-বিধায়কদের প্রতিনিধি দলকে কার্যত হেনস্তার মুখেও পড়তে হয়। লাগাতার লড়াই চালিয়ে গিয়েছে পঞ্চায়েত দপ্তর। সেকথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু ১০০ দিনের কাজ নয়, রাজ্যে আবাস-সড়ক যোজনা সহ অন্যান্য খাতের মোট ১ লক্ষ ৭২ হাজার কোটি টাকার বকেয়া দ্রুত মেটানোর দাবিও তুলেছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন