তেল আভিভ: শেষপর্যন্ত কি মহাযুদ্ধেই পর্যবসিত হচ্ছে ইজরায়েল-ইরান সংঘাত? দক্ষিণ চীন সাগরে মোতায়েন মার্কিন রণতরী ইউএসএস নিমিৎজের গতিবিধি দেখে সেই আশঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হতে শুরু করেছে। রবিবার রাতে ইজরায়েলের তেল আভিভে মার্কিন দূতাবাসের পাশেই আছড়ে পড়ে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। ওই বিস্ফোরণে কোনও মার্কিন কূটনীতিক বা কর্মীর আঘাত না লাগলেও ভবনটির ক্ষতি হয়। সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হয় দূতাবাস। কর্মীদেরও অবিলম্বে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়। তারপরেই খবর মেলে পশ্চিম এশিয়ার দিকে রওনা দিয়েছে মার্কিন এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার নিমিৎজ। এমনকী রবিবার রাতেই ইউরোপের দিকে উড়ে গিয়েছে মার্কিন বায়ুসেনার ৩০টি এয়ারক্র্যাফ্ট। সেগুলির গন্তব্য এখনও অজানা। সেই খবরেও অবশ্য যুদ্ধের তীব্রতা বন্ধ হয়নি। সোমবার দুপুরেই ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সগর্বে ঘোষণা করেন, ‘তেহরানের আকাশ এখন আমাদের দখলে। জয়ের পথে এগিয়ে চলেছি আমরা।’ বিকেলেই তেহরানে সংবাদ পরিবেশন চলাকালীন সরকারি টিভি চ্যানেলের দপ্তরে আছড়ে পড়ে ইজরায়েলি মিসাইল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই হুঁশিয়রি দিয়ে রেখেছিলেন, ‘আমেরিকার আঘাত লাগলে ইরানকে ধ্বংস করে দেব।’ সেই হুঁশিয়ারির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্ত হয় দূতাবাস। ট্রাম্প পাল্টা কী পদক্ষেপ করবেন, তার দিকেই নজর ছিল সকলের। এর মধ্যেই সোমবার কানাডায় জি-৭ গোষ্ঠীর বৈঠকে ফের সুর চড়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দাবি, ইজরায়েল-ইরান সংঘাতের অবসানে জি-৭ গোষ্ঠীর যৌথ বিবৃতির খসড়ায় সই করেননি ট্রাম্প। উল্টে সাফ জানিয়েছেন, ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে কোনওভাবেই জয়ী হবে না ইরান। বরং তাদের আর দেরি না করে আলোচনায় বসা উচিত। এর মধ্যেই নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ট্রাম্পকে দু’বার খুনের চেষ্টা করেছিল ইরান। আমেরিকায় নির্বাচনী প্রচারের সময়ই হামলার চেষ্টা হয়। কারণ, ট্রাম্পই তেহরানের ‘এক নম্বর শত্রু’।
বেজিংয়ের দাপাদাপি ঠেকাতে এতদিন দক্ষিণ চীন সাগরে টহল দিত নিমিত্জ। চলতি সপ্তাহের শেষে সেটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভিয়েতনামের ডানাং সিটি বন্দরে যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু সোমবার সকালেই হঠাত্ই মুখ ঘুরে যায় মার্কিন নৌবাহিনীর সবচেয়ে পুরনো রণতরীটির। জরুরি প্রয়োজনের কারণে সেটি আপাতত বন্দরে যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে হ্যানয়ে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। জাহাজের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানো একটি ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, দক্ষিণ চীন সাগর থেকে নিমিৎজের অভিমুখ এখন আরব সাগরের ইরান উপকূলের দিকে!
ইজরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এ শুরু থেকেই টার্গেট করেছিল ইরানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে। সেই কৌশলে তারা সফল। তারপর থেকেই ইজরায়েলি জেট ক্রমাগত ইরানের ভিতরে ঢুকে বোমা ও শর্ট রেঞ্জ মিসাইল ছুড়ে চলেছে। ইজরায়েলি সেনার মুখপাত্র এফি ডেফরিন দাবি করেছেন, তাঁদের ৫০টি যুদ্ধবিমান ইরানে ঢুকে অভিযান চালায়। ইরানের ১২০টি সারফেস টু সারফেস মিসাইল লঞ্চার ধ্বংস করা গিয়েছে, যা সেদেশের মোট মিসাইল লঞ্চারের ৩০ শতাংশ। ইজরায়েলি হামলায় এখনও পর্যন্ত ইরানে ২২৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, মৃতের সংখ্যা চারশোর বেশি। আহত প্রায় দেড় হাজার।
ইরান অবশ্য হাল ছাড়ছে না। রবিবার তারা ফের ৪০০-রও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ইজরায়েলের তেল আভিভ, পেটা তিকভা, হাইফা বন্দর সহ একাধিক এলাকা। একাধিক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইজরায়েলের বসতি এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সারি সারি বহুতল বিধ্বস্ত। এখনও পর্যন্ত ২৪ জন ইজরায়েলি নাগরিকের মারা গিয়েছেন বলে খবর। আহতের সংখ্যা পাঁচশো ছাড়িয়েছে। ইজরায়েলি দুই গুপ্তচরকেও খতম করেছে তেহরান।
এই যুদ্ধে জিততে ইরান হাতিয়ার করতে চাইছে ‘ধর্ম’কেও। সৌদি আরব, তুরস্ক, পাকিস্তান সহ মুসলিমপ্রধান দেশগুলিকে একজোট হয়ে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তেহরানের শীর্ষ নেতা মহসেন রেজাই। যদিও সংশ্লিষ্ট দেশগুলি এব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন