পুরুলিয়া: রাঘবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে টেন্ডার আটকে থাকার ঘটনায় নিজের দলের প্রধান ‘শিক্ষিত নয়’ বলে মন্তব্য করলেন বিজেপি নেতা তথা উপপ্রধান। শিক্ষিত না হওয়াতেই তাঁকে ভুল বুঝিয়ে এবং কখনও আবার জোর করেও স্বাক্ষর করিয়ে অফিসের কর্মচারীরা দুর্নীতি করছেন বলে অভিযোগ। অন্যদিকে টেন্ডার বির্তকের মাঝেই বৃহস্পতিবার বিজেপির এক প্রতিনিধি দল পুরুলিয়া সদরের মহকুমা শাসকের সঙ্গে দেখা করেন। যদিও ওই প্রতিনিধি দলে প্রধান সহ অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন না বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, পুরুলিয়া ২ ব্লকের রাঘবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে একক ভাবে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। ঠিকাদারদের ‘সেটিং’ না হওয়াতেই টেন্ডার দীর্ঘদিন আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। এমনকী বিজেপির এক নেতা প্রধানকে কার্যত চাপ দিয়ে ওই টেন্ডার আটকে রাখতে বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ। প্রধানও স্পষ্ট ভাবে জানান, দলের চাপ রয়েছে। টেন্ডার আটকে থাকায় এসডিও আগেই প্রধানকে শোকজ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল পুরুলিয়া সদরের মহকুমা শাসক উৎপল ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন। ওই প্রতিনিধি দলে উপপ্রধান সহ একাধিক পঞ্চায়েত সদস্যের পাশাপাশি বিজেপির যুব মোর্চার নেতা সুবর্ণ পাঠক এবং পুরুলিয়া পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলার প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন। দলের থেকে চাপ দিয়ে টেন্ডার আটকে রাখার বিষয়ে সুবর্ণ পাঠক বলেন, রাঘবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে। পঞ্চায়েতের সেক্রেটারি, নির্মাণ সহায়করা এই কাজে যুক্ত। কাজ না হয়েও বিল পেয়েছে ঠিকাদার। সুবর্ণবাবু আরও বলেন, দল আমাকে রাঘবপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছে। দলের নিয়ন্ত্রণেই গ্রাম পঞ্চায়েত পরিচালিত হয়। প্রধান সহ মেম্বাররা দুর্নীতিতে জড়িত নন। প্রধান কোনও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন কি না, তা তো দেখতেই হবে। তিনি আরও বলেন, পঞ্চায়েত সদস্যরা যে পরিকল্পনা জমা দিয়েছিল এনএস এবং পঞ্চায়েতের কর্মীরা তার অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। কর্মচারীরা ৮ শতাংশ ঘুষ চান বলেও অভিযোগ সুবর্ণবাবুর। তাই ওই টেন্ডার আটকে রাখা হয়েছে। প্রধানের স্বাক্ষর থাকায় তিনিও দুর্নীতির দায় এড়াতে পারেন না একথা ঠিক। তবে প্রধানকে জোর করে সই করিয়েছেন স্টাফরা। যদিও এ বিষয়ে কেন থানায় বা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়নি জানতে চাইলে সুবর্ণবাবু বলেন, দলকে জানিয়েছি। অন্যদিকে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান অমিত অধিকারী বলেন, অফিসের মধ্যে দুর্নীতি চলছে একথা ঠিক। প্রধান আসলে অতটা শিক্ষিত নন। শিক্ষিত প্রধান আমরা করতে পারিনি। প্রধান ইংরেজি অতটা পড়তে পারেন না। তাই ভুল বুঝিয়ে তাঁকে স্বাক্ষর করান কর্মচারীরা। এদিন উপপ্রধান এবং বিজেপি নেতারা এসডিওর কাছে এলেও প্রধান সহ বিজেপির অধিকাংশ সদস্য সেখানে আসেননি। প্রধান দীনবন্ধু মাহাত বলেন, কাজে ব্যস্ত আছি। কোনও কথা বলতে পারব না। অন্যদিকে পঞ্চায়েতের কর্মীদের দুর্নীতির বিষয়ে সেক্রেটারি দেবদুলাল মণ্ডল বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। প্রধানকে কি জোর করে বা ভুল বুঝিয়ে স্বাক্ষর করানো সম্ভব নাকি। তাছাড়া পঞ্চায়েতে এতজন সদস্যের কথা না শুনে কর্মচারীরা চলবে কী করে। সরকারি কর্মচারী হয়ে আমরা কেন প্রধানকে জোর করতে যাব বলুন তো। পার্সেন্টেজ নেওয়ার অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানান দেবদুলালবাবু। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে সরকরি কর্মচারীদের পাশাপাশি প্রধান সহ অন্যান্যদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুরুলিয়ার মহকুমা শাসক উৎপল ঘোষ বলেন, আগেই রাঘবপুরের প্রধানকে শোকজ করা হয়েছিল। সব বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কোনও লিখিত অভিযোগ কেউ করেননি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন