
নয়াদিল্লি: একসপ্তাহ কেটে গেল। পহেলগাঁওয়ের নারকীয় জঙ্গি হামলার উচিত জবাব দিতেই হবে। টার্গেট, টাইমিং এবং পদ্ধতি— সব আপনারা স্থির করুন। দেশের স্বার্থে যা ভালো মনে হয় করবেন। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হওয়া এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিন সামরিক বাহিনীর প্রধানকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন নরেন্দ্র মোদি। ঠিক এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত, যখন পহেলগাঁও হানায় পাকিস্তানের যোগসাজশ গোটা দুনিয়ার সামনে জলের মতো স্পষ্ট। সামনে এসেছে আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। বৈসরণ উপত্যকায় ধর্ম বেছে বেছে হত্যালীলা চালানো লস্কর জঙ্গি হাসিম মুসা আসলে পাকিস্তানি সেনার প্রাক্তন এলিট কমান্ডো। ‘মাউন্টেন কমব্যাট স্পেশালিস্ট’। অর্থাৎ, পর্বতসঙ্কুল এলাকায় গেরিলা যুদ্ধের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
এই
প্রবণতা অবশ্য নতুন নয়। বস্তুত শুরু থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে জঙ্গি অথবা
‘প্রক্সি’ যুদ্ধের আড়ালে থাকে পাকিস্তানি সেনা। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র
দু’মাসের মধ্যে পাকিস্তানি পাঠান আদিবাসীদের এক বাহিনী কাশ্মীরে আক্রমণ
করেছিল। কিছুদিনের মধ্যেই ফাঁস হয়ে যায় যে, ওই হামলার নেতৃত্বে ছিল পাক
সেনার মেজর ও কর্নেলরা। তারপর যত দিন গিয়েছে, জঙ্গি হামলার আড়ালে পাক সেনা
আধিকারিক ও জওয়ানদের প্রত্যক্ষ সংযোগ আরও বেড়েছে। সাম্প্রতিকতম উদাহরণ
পহেলগাঁও। জানা যাচ্ছে, বৈসরণে হামলকারী চার-ছ’জন জঙ্গির প্রধান হাসিম মুসা
নিছক লস্কর-ই-তোইবার জঙ্গি নয়। সে পাকিস্তানের প্যারা মিলিটারি বাহিনী
স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের অন্যতম কমান্ডো। এই স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের
সদস্যদের জল, স্থল, আকাশ, সবরকম যুদ্ধের ট্রেনিং দেওয়া হয়। সেই কারণেই
চোখের নিমেষে অপারেশন ঘটিয়ে তারা দ্রুত পাহাড় জঙ্গল অতিক্রম করতে পারে। আর
হাসিম মুসার সেই ট্রেনিং রয়েছে। তাই দ্রুত পহেলগাঁও থেকে সে ও আলি ভাই
পালিয়েছে পীর পঞ্জালের দিকে। এখনও ধরা পড়েনি। যদিও ভারতীয় সেনাবাহিনীর
বিশেষ অপারেশন গ্রুপ যেভাবে অভিযান চালাচ্ছে, তার জেরে তারা এখনও
পাকিস্তানে পালাতে পারেনি বলেই সন্দেহ।
তদন্তে উঠে এসেছে, তিরিশ
ছুঁইছুঁই হাসিম মুসা কাঠুয়া কিংবা সাম্বা সেক্টর দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ
করেছিল। তারপর ধীরে ধীরে রাজৌরি-পুঞ্চ অঞ্চলের ‘ডেরা কি গলি’ এলাকায়
লস্করের সক্রিয় সদস্য হিসেবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে সে। দক্ষ
কমান্ডোদের মতোই পুলিস বা যৌথ বাহিনীর টহলদারি থেকে বাঁচতে দুর্গম
পার্বত্য এলাকায় ক্রমাগত অবস্থান বদলেছে মুসা ও তার দলবল। এমনকী,
স্থানীয়দের সঙ্গেও কোনওরকম যোগাযোগ রাখেনি। গ্রামে ঢুকে খাবার বা অন্য
রসদের খোঁজ করতে পর্যন্ত তাদের দেখেনি কেউ।
এই পরিস্থিতিতে কবে
পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেবে ভারত? মনে করা হচ্ছে, সময় সমাগত। এদিন সকালে
‘যুগম’ নামক একটি কনক্লেভ অনুষ্ঠানে অবশ্য সেব্যাপারে রহস্য জিইয়ে রেখেছেন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলেছেন, ‘আমাদের হাতে সময় কম। কিন্তু অনেক
বড় কাজ করতে হবে।’ মোদির এই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে জোরদার জল্পনা শুরু
হয়ে যায় যে, ভারতের প্রত্যাঘাতের কাউন্টডাউন শুরু। বিকেলে নিজের বাসভবনে
সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা বৈঠক আহ্বান করেন মোদি। বৈঠকে হাজির
ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত
দোভাল, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ এবং তিন সামরিক বাহিনীর প্রধান। সেখানে তিন
বাহিনীকে ফ্রি হ্যান্ড দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে। তারপরই ডাকা হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক,যা সর্বোচ্চ স্তরের পদক্ষেপে সিলমোহর দেয়। এদিন ভারত-পাকিস্তানকে সংযত হওয়ার বার্তা দিয়েছে চীনের বিদেশ মন্ত্রক। এই মরিয়া বার্তার কারণ কী? চীন কি তবে স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে যে, ভারত পাকিস্তানের উপর আঘাত হানতে প্রস্তুত?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন