
নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের দাবি কী ছিল? চীন থেকে পাওয়া জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান থেকে তারা নাকি মিসাইল ছুড়ে অচল করে দিয়েছে পাঞ্জাবের এয়ারফোর্স বেস। এমনকী সেই মিসাইলে ধ্বংস হয়েছে ভারতের এলিট ক্লাস এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে পাকিস্তানের এই দাবিকে নস্যাৎ করতে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেছে বেছে পাঞ্জাবের আদমপুর এয়ার ফোর্স বেসস্টেশনে গেলেন। বায়ুসেনা জওয়ানদের স্যালুট করলেন।
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সাফল্যের প্রশংসা করে সরাসরি পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিলেন, ‘আর একবার... সন্ত্রাসই হোক অথবা পাক সেনা, যে কোনওরকম অ্যাটাক ভারতের উপর হলে পাকিস্তানকে ধূলিসাৎ করা হবে।’ মোদি আদমপুর বেসের যে পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে এই হুঁশিয়ারি দিলেন, ঠিক তার পিছনেই দৃশ্যমান ছিল এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। রাখা হয়েছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে। অর্থাৎ যা নাকি পাকিস্তানের আঘাতে ধ্বংস হয়েছে! তারই সামনে দাঁড়িয়ে মোদির পাল্টা বার্তা, ‘পাকিস্তান মিথ্যা প্রচার করে নিজেদের দেশে মুখরক্ষা করতে চাইছে। আদতে এস-৪০০ বহাল তবিয়তে অটুট।’ মোদি বলেন, ‘পাকিস্তান জেনে রাখুক, এটা কিন্তু অন্য ভারত।’
যুদ্ধবিরতির পর পাকিস্তানের প্রতি ভারত সরকারের হুঙ্কার
বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। এই যুদ্ধে ভারতের জয়ের দাবিতে মঙ্গলবার থেকে দেশজুড়ে
তিরঙ্গা যাত্রা শুরু করেছে বিজেপিও। দলকে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্দেশ
দিয়েছে, এই সংঘাতে মোদির ভারত যে পাকিস্তান এবং সন্ত্রাসকে বিপর্যস্ত করে
দিয়েছে, এই প্রচার লাগাতার চালাতে হবে। একদিকে প্রধানমন্ত্রী সুর চড়িয়ে
বলেছেন, ‘ভারতের বাহিনী যখন ভারতমাতা কী জয় স্লোগান দেয়, শত্রুপক্ষের বুকে
কাঁপুনি ধরে। ভারতের মিসাইল আর ড্রোনশক্তির কথা চিন্তা করে পাকিস্তানের
বহুদিন ঘুম হবে না। তাই আবার পাকিস্তানকে সাবধান করছি, এরকম চেষ্টা আর যেন
তারা না করে। পরিণতি ভালো হবে না।’
আবার অন্যদিকে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকও এই প্রথম ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাশ্মীর-মধ্যস্থতা প্রস্তাব নিয়ে কড়া বিরোধিতার পথে হেঁটেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণবীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে ইস্যুতেই কথা হোক, সেটা দ্বিপাক্ষিক হবে। প্রথমত, কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ভারত মেনে নেবে না। দ্বিতীয়ত, কাশ্মীর নিয়ে কোনও কথা হবে না। কথা যদি কখনও হয়, সেটা হবে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে।’ কাশ্মীর নিয়ে স্থায়ী সমাধান তাঁর মধ্যস্থতায় হবে বলে দাবি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ তিনি স্থায়ীভাবে থামিয়ে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। প্রত্যাশিতভাবেই ভারত সরকার কেন এ নিয়ে নীরব, এই প্রশ্ন করেছে বিরোধীরা। দেশজুড়েও উঠেছে প্রশ্ন। সেই অস্বস্তি কাটাতেই বিদেশ মন্ত্রক জানিয়ে দিল ভারতের কঠোর অবস্থান।
মোদি মঙ্গলবার আদমপুরে বলেন, ‘ভারত শান্তি চায়। কিন্তু মানবতার উপর আঘাত এলে শত্রুকে মাটিতে মিশিয়ে দিতেও জানে।’ মোদির এই কড়া সুরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ভারতীয় সামরিক বাহিনী সম্পূর্ণ তৈরি। যুদ্ধবিরতি হলেও ফরওয়ার্ড পজিশন থেকে সেনা সরানো হয়নি। বার্তা স্পষ্ট, আগে পাকিস্তান সেনা সরাক। ডিজিএমও স্তরের বৈঠকে স্থির হয়েছে, একটি গুলিও কেউ চালাবে না। তাহলে আর সংঘর্ষ বিরতি মানা হবে না। বস্তুত যুদ্ধবিরতি হলেও উত্তেজনা এবং আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিমান চলাচল বাতিল করা হয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী তিন সামরিক প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। কাশ্মীরে তখন চলছিল লস্কর জঙ্গিদের সঙ্গে আধা সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ! সুতরাং, যুদ্ধবিরতি হয়েছে, কিন্তু বাতাসে বারুদের গন্ধ!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন