
লালবাগ: সন্ধ্যা নামতেই লালবাগ মহকুমার ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকার গোপন ডেরায় বসছে জুয়ার আসর। মধ্যরাত পর্যন্ত রমরমিয়ে চলছে সেই আসর। জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে সীমান্তের যুবসমাজ থেকে খেটে খাওয়া গরিব মানুষ। জুয়ার টাকার জোগানে হাত পড়ছে ঘরের জিনিসপত্র থেকে বাড়ির মহিলাদের গহনায়। যার জেরে দাম্পত্য কলহ, পারিবারিক অশান্তি সীমান্তবাসীদের জীবনে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছে। এপ্রিল মাসে ভগবানগোলা ও রানিতলা থানা এলাকায় গোপন ডেরায় তিনটি জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে পুলিস মোট ১৮ জন জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার এবং মোটা অঙ্কের বোর্ডমানি বাজেয়াপ্ত করে।
লালবাগ মহকুমার বিভিন্ন থানা এলাকার
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের আমবাগান, নদীর পাড়, জঙ্গল বা ঝোপঝাড় ঘেরা চর,
পরিত্যক্ত বাড়ি প্রভৃতি গোপন ডেরাগুলিই মূলত জুয়ার ঠেক। পুলিসের চোখকে
ফাঁকি দিতেই প্রত্যন্ত এলাকার ওই সমস্ত গোপন ডেরাগুলিকে জুয়ার ঠেক হিসেবে
বেছে নেওয়া হয়। সারা বছর ধরে ওই ঠেকগুলিতে জুয়ার আসর বসলেও কনকনে শীত এবং
বর্ষার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার দিনগুলিতে রমরমা বাড়ে। মোমবাতি বা মোবাইলের
টর্চ জ্বেলে আসর চলে। জুয়ার আসর চলাকালীন ওই এলাকায় পুলিসের অভিযান
সঙ্কেতের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্থানীয় কাউকে নজরদারিতে রাখা হয়।
পরিবর্তে কিছু টাকাপয়সা দেওয়া হয় তাকে। তবে এত সাবধানতা সত্ত্বেও সবসময়
পুলিসের নজর এড়ানো সম্ভব হয় না। স্থানীয় সোর্সকে কাজে লাগিয়ে জুয়ার আসরে
মাঝেমধ্যে পুলিস হানা দেয়। অনেক ক্ষেত্রেও সাফল্যও মেলে। পুলিসের অভিযানে
ঠেক বদল হলেও আসর চলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জুয়ার নেশা
সীমান্তের খেটে খাওয়া গরিব মানুষগুলির জীবনে একাধিক সমস্যা নিয়ে হাজির
হচ্ছে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যটি দিনের শেষে কাজ থেকে ফিরে বাড়ি না
গিয়ে সটান জুয়ার আসরে হাজির হচ্ছে। সারাদিনের রোজগার কয়েক মুহূর্তে জুয়ার
বোর্ডে হেরে বাড়ি ফিরছে। ফলে স্ত্রী ও সন্তানকে প্রায়ই অভুক্ত অবস্থায়
থাকতে হচ্ছে। রানিতলার শিবনগরের মনিরুল শেখ বলেন, রাজনৈতিক দলের স্থানীয়
নেতাদের ছাতার তলায় থাকা বাহুবলীরা জুয়ার ঠেকগুলি চালায়। জুয়ার বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ করলেই মেলে চোখ রাঙানি, শাসানি এমনকি প্রাণনাশের হুমকি। তাই চোখের
সামনে বাড়ির সন্তান, স্বামী, বাবা বা পরিবারের সদস্যদের জুয়ার নেশায় আসক্ত
হয়ে সর্বস্বান্ত হতে দেখা ছাড়া কিছু করার থাকছে না।
কাজেই জুয়াড়িদের ধরে কিছু হবে না। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য যাদের অঙ্গুলিহেলনে আসর চলছে, তাদের কাছে পৌঁছতে হবে। নির্মলচরের বাসিন্দা বৃদ্ধ মুস্তাকিন বিশ্বাস বলেন, অল্প সময়ে বিনা পরিশ্রমে মোটা অঙ্কের টাকা রোজগারের আশায় কলেজ পডুয়ারাও জুয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। একটা সমাজের ক্ষেত্রে এটি খুব দুশ্চিন্তার বিষয়। জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, জুয়ার ঠেক বন্ধ করতে ধারাবাহিক অভিযান চালানো হচ্ছে। মাঝে মধ্যে সাফল্যও আসছে। তবে সীমান্তের প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগ সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে জুয়ার আসরে পৌঁছতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন