
চুঁচুড়া: ব্রিটিশদের কাছে তখন ত্রাস বাঙলার ডাকাতরা। হুগলি ও সংলগ্ন এলাকায় প্রবল দাপট দুর্দান্ত সব ডাকাতদের। তাদের দাপটে থরহরিকম্প ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। ডাকাত দমনে পরাধীন বাংলায় ইংরেজরা তৈরি করল ‘ডাকাতিয়া কমিশন’। তার শেষ কমিশনারের অফিস, বাড়ি ছিল হুগলির চুঁচুড়াতে। সে সব এখন হারিয়ে গিয়েছে। হারিয়ে গিয়েছেন বিশে, রঘু ডাকাতদের মতো হুগলির দুর্দান্ত ডাকাতরাও। আর কালের গর্ভে তলিয়েছে ডাকাতিয়া কমিশনারের সাবেক অফিস। একাধিকবার হাতবদল হয়েছে। বর্তমানে সেখানে সরকারি আবাসন। প্রাচীন গঠন কাঠামোর সামান্যতম ছিটেও আজ অবশিষ্ট নেই। বিস্মরণের অতলেই তলিয়েছে সেই উত্তাল সময়ের ঐতিহাসিক ভবনের স্মৃতি।
চুঁচুড়া উৎসবের সময় সেই অফিস ঘিরে শুরু হয় চর্চা। চুঁচুড়ার সাংস্কৃতিক কর্মী সৌমিত্র সিংহ বলেন, ‘হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলের উল্টোদিকে বর্তমানে সরকারি আবাসন। ইতিহাস বলে, সেখানেই ছিল বাংলার ডাকাতিয়া কমিশনারের অফিস।’ প্রয়াত সুধীরকুমার মিত্র তাঁর হুগলির ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থে জায়গাটির উল্লেখ করেছেন। বাড়িটি সরকারি আবাসন হলেও খাতায়কলমে আজও নাম-‘রেক্স হাউস’। কমিশন উঠে যাওয়ার পর ম্যাডাম রেক্স নামে এক বিদেশি বাড়িটি কিনেছিলেন। চুঁচুড়ার ইতিহাসের চর্চাকার সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘চুঁচুড়ার চকবাজারে ডাকাতিয়া কমিশনের শেষ কমিশনারের বাড়ি ও অফিস ছিল। বাংলার ডাকাত দমন হয়েছে দাবি করে ১৮৬৫ সালে কমিশন তুলে দেয় ব্রিটিশ সরকার। বাংলা ও হুগলির ইতিহাসে ডাকাত ও ডাকাতিয়া কমিশনের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। চুঁচুড়ায় থাকা ইতিহাসের অন্তিমপর্ব খুঁজে দেখা যেতেই পারে।’ বিধায়ক অসিত মজুমদার বলেন, ‘ওই বিষয়ে খোঁজ নেব।’
ফ্রেডরিক হ্যালিডে বঙ্গের ছোটলাট হয়েছিলেন ১৮৫৪ সালে। তিনি হুগলির ম্যাজিস্ট্রেটও ছিলেন। বঙ্গদেশে ডাকাতি ও তার প্রভাব সম্পর্কে কাজের সূত্রে তাঁর ধারণা ছিল। তিনিই দুর্দান্ত ডাকাতদের দমন করতে কমিশন তৈরি করেছিলেন। তৃতীয় কমিশনার ছিলেন ডক্টর জ্যাকসন। পরে তাঁর ছেলে রাইলি জ্যাকসন কমিশনার হয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন বঙ্গের ডাকাতিয়া কমিশনের শেষ কমিশনার। তাঁর আবাস ও অফিস ছিল চুঁচুড়ার চকবাজারে। এখন হারিয়েই গিয়েছে সে ইতিহাস। ডাকাতরা আজ গল্পের পাতায় স্থান পেয়েছেন। আর বাংলার প্রথম ডাকাতিয়া কমিশনের ইতিহাস, স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি হারিয়েছে কালের গর্ভে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন