
কলকাতা: এবার কি স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হারে কোপ পড়তে চলেছে? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক রিপোর্টে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। তাদের বক্তব্য, বর্তমানে পিপিএফ, কিষান বিকাশপত্র, মান্থলি ইনকাম স্কিম বা রেকারিং ডিপোজিটের মতো স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে যে সুদের হার রয়েছে, তা যথেষ্ট ‘বেশি’। এই সুদের হার যদি চলতে থাকে, তাহলে ব্যাঙ্কগুলিতে ডিপোজিটের হার কমতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আরবিআই। তেমনটা হলে টান পড়বে ব্যাঙ্কগুলির নগদ জোগানে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের এই মতামতকে গুরুত্ব দিলে, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদের হারে কোপ পড়তে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
কী
বলছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট? ২০২৫ সালের এপ্রিলের গোড়ায় বাণিজ্যিক
ব্যাঙ্কগুলিতে যে ডিপোজিট জমা পড়েছে, তার বৃদ্ধির হার ১০.৪ শতাংশ। এক বছর
আগে সেই বৃদ্ধির হার ছিল ১৩.৩ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাঙ্কগুলিতে জমা টাকার হার
যতটা বৃদ্ধির আশা করা হয়েছিল, তা হয়নি। কারণ? মানুষ ব্যাঙ্কে তুলনামূলক কম
সঞ্চয় করেছেন। পাশাপাশি আরবিআই বলছে, এদেশে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির
সুদের হার কত হবে, তা নির্ভর করে সাধারণত সরকারি বন্ডের সুদের হারের উপর।
যে ফর্মুলা ধরে সেই হিসেব হয়, তাতে দেখা যাচ্ছে স্বাভাবিকের তুলনায়
প্রকল্পভেদে সুদের হার ০.১৬ শতাংশ থেকে ০.৬৬ শতাংশ পর্যন্ত ‘বেশি’।
সম্প্রতি পরপর দু’বার রেপো রেট কমিয়েছে আরবিআই। এই রেপোর উপর নির্ভর করেই
সাধারণত ঋণ বা আমানতের সুদের হার নির্ধারণ করে থাকে ব্যাঙ্কগুলি।
আরবিআইয়ের দাবি, রেপো রেট কমে যাওয়ায় ব্যাঙ্কগুলির ডিপোজিট বা আমানতের
উপর সুদের হার কমানোর পরিস্থিতি বা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বল্প
সঞ্চয় স্কিমগুলিতে যদি বাড়তি সুদের হার জারি থাকে, তাহলে ব্যাঙ্কগুলির উপর
চাপ বাড়বে। কারণ, মানুষ তাহলে ওই স্কিমগুলিতে বিনিয়োগে ঝুঁকবে।
ব্যাঙ্কগুলি
রেপো রেটের উপর নির্ভর করে আমানতের সুদের হার নির্ধারণ করলেও, স্বল্প
সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদের হার নির্ধারণের সঙ্গে এর সরাসরি কোনও সম্পর্ক
নেই। কারণ, স্বল্প সঞ্চয়ের সুদের হার নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক,
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নয়। কিন্তু দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যেখানে
আরবিআইয়ের পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ নিয়ে তাদের
উদ্বেগের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারে না কেন্দ্র। তিন মাস অন্তর স্বল্প সঞ্চয়ের
সুদের হার ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে তারা
এই প্রকল্পগুলিতে সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে। গত ১ এপ্রিলের ঘোষণা
অনুযায়ী, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সেই সুদের হার জারি থাকবে। ১ জুলাই থেকে
পরবর্তী তিন মাসের জন্য ফের সুদের হার ঘোষণা করবে অর্থমন্ত্রক। সেক্ষেত্রে
তারা যদি আরবিআইয়ের উদ্বেগকে মান্যতা দেয়, তাহলে সুদের হার কমতে বাধ্য,
বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে বেশ কিছু স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প ডাকঘরের
পাশাপাশি ব্যাঙ্কেও চালু আছে। পাশাপাশি সেভিংস অ্যাকাউন্টে ৪ শতাংশ হারে
সুদ মিলছে ডাকঘরে। এই স্কিম বহাল থাকলে ব্যাঙ্কগুলির নিজস্ব ফিক্সড
ডিপোজিট বা সেভিংস অ্যাকাউন্ট জনপ্রিয়তা হারাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে
সত্যিই যদি সুদের হার কমে, তাহলে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য স্কিম থেকে শুরু
করে এমআইএসের মতো জনপ্রিয় প্রকল্পের গ্রাহকদের সমস্যার যে অন্ত থাকবে না,
তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন