কলকাতা: ট্যাংরাকাণ্ডের ছায়া এবার হালতুতে। একই পরিবারের তিন সদস্যের দেহ উদ্ধার! আবার কলকাতায় তিন জনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রহস্য দানা বাঁধছে। মঙ্গলবার কসবার হালতুর একটি বাড়ি থেকে স্বামী, স্ত্রী এবং তাঁদের আড়াই বছরের পুত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাটি তিনজনকে আটকে করেছে কসবা থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার হালতুর পূর্বপল্লীর এলাকার একটি বাড়ি থেকে তিন জনের দেহ উদ্ধার হয়। ওই বাড়িতে সপরিবার থাকতেন ৪০ বছর বয়সী সোমনাথ রায়। তিনি পেশায় অটোচালক ছিলেন। সোমনাথ ছাড়াও ওই বাড়িতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী সুমিত্রা (৩৬) এবং আড়াই বছরের পুত্র রুদ্রনীল। মঙ্গলবার এই তিন জনকেই ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় নিজেদের বাড়িতে।
আড়াই বছরের পুত্রের দেহ নিজের সঙ্গে বেঁধেছিলে। তার পরে নিজে ও গলায় দড়ি দিয়েছিলেন ৪০ বছরের সোমনাথ রায়। গলায় দড়ি দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী, ৩৬ বছরের সুমিত্রা রায়। কেন এই চরম পদক্ষেপ করলেন কসবার হালতুর দম্পতি? সুমিত্রার আত্মীয়দের দাবি, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের কারণেই শিশুপুত্রকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বাবা-মা। নিজের দেওয়ালে লেখা সুইসাইড নোটেও সেই ইঙ্গিতই করছে। সেখানেও সম্পত্তি নিয়ে সমস্যার কথা উল্লেখ করা রয়েছে। সূত্রের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ, সোমনাথের সেই মামা, মামি এবং মাসিকে আটকে করে নিয়ে গিয়েছিলে পুলিশ। তাঁদের বৈজ্ঞানিক দলের সদস্যরা (সায়েন্টিফিক উইং) এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কসবায় সোমনাথের বাড়িতে আসেন স্থানীয় বিধায়ক জাভেদ খানও।
ঘটনার খবর পেয়ে হালতুর বাড়িতে পৌঁছয় কসবা থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। কী কারণে মৃত্যু তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এটি আত্মহত্যার ঘটনা। মৃতদের ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়েছে। যদিও সেই নোটে কী লেখা আছে তা এখনও জানা যায়নি। মনে করা হচ্ছে, সোমনাথ আর্থিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সেই চাপ থেকেই পরিবারকে নিয়ে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন। যদিও এই মৃত্যুর নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মৃতের পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারীরা। কথা বলছেন স্থানীয়দের সঙ্গেও। এক আত্মীয়ের দাবি, এক আত্মীয়ের সঙ্গে সোমনাথদের সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা চলছিল। এই মৃত্যুর নেপথ্যে সেই অশান্তির কারণও রয়েছে কি না, তা-ও দেখছে পুলিশ।
কসবা কাণ্ডের ট্যাংরার ঘটনার ছায়া থাকলেও কারণ এক নয় বলে দাবি করেছেন সুমিত্রার বাপের বাড়ির লোকজন। তাঁদের দাবি, সম্পত্তির কারণেই আত্মহত্যা করেছেন স্বামী-স্ত্রী। সঙ্গে নিয়েছেন সন্তানকেও। সুমিত্রার বাবা হাউহাউ করে কেঁদে বলেন, ‘অনেক বার বলেছিলাম জামাইকে বিক্রি করে দিতে চলি আয়। কোনও বাড়িতে গিয়ে ভাড়া থাক। শোনে নি।’ বৃদ্ধের কথায়, ‘সোমনাথের বাবা-মা থাকার জন্য জমি দিয়ে গিয়েছিল। মামা-মামি এসে দাবি করেন, ওই জমি ভাগ করতে হবে। তিন-চার বছর ধরে মেয়ে-জামাইয়ের উপর অত্যাচার করত মামা-মামি।’ বৃদ্ধ জানালেন, তাঁর মেয়ে-জামাইয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। জামাই অটো চালাতেন। সে-ই সর্বাই লোকে সহ্য করতে পারেনি। তাঁর কথায়, ‘ওদের ভালবাসা দেখে লোকে সহ্য করতে পারেনি।’ তিনি জানিয়েছেন, গত রবিবার মেয়ে-জামাই নেহাটির বড়মার মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে তাঁর বাড়িতে প্রসাদও দিয়ে আসেন। সুমিত্রার দিদি দাবি করেন, বোনের ছেলেকে মেরেছে। অনেক দিন ধরে ঝামেলা।’
সুমিত্রার পরিবার সোমনাথের মামা-মামির দিকে আঙুল তুললেও স্থানীয়দের একাংশ আবার দাবি করেছেন, তাঁর বাড়িতে পাওনাদারও আসত। তাঁরা শুনেছেন, তবে দেখেননি। এক প্রতিবেশী শ্যামলী দাস বলেন, ‘আমি শুনেছি ওঁর মামাই বলেছিলেন, পাওনাদার এসে টাকা চাইতেন।’ শ্যামলীর আরও দাবি, সোমনাথ মাঝেমধ্যে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলতেন না। শিশুটিকেও পাড়ার কারও সঙ্গে মিশতে দিতেন না। তিনি জানিয়েছেন, সোমনাথের মামা-মামি কলকাতা পুলিশে চাকরি করেন। তাঁর মাসি পেনশনভোগী। তিনি সোমনাথ মাসির পেনশন নিতেন এবং তাঁকে দেখাশোনা করতেন। তাঁর নিজের অটো ছিল। তবে নিজে তিনি সেই অটো চালাতেন না। চালানোর জন্য লোক নিয়োগ করেছিলেন। সারা দিন সোমনাথ বাইরে থাকতেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন