মালদ: রাস্তার ধারে সরকারি খাস সরকারি জমিতে বাড়ি। ইটের দেওয়ালের উপর টালির ছাউনি। অসংখ্য ফাঁটল। বারান্দায় বাঁশের খুঁটিতে দড়ি দিয়ে বাঁধা এক যুবতী। বয়স বোঝার উপায় নেই। অবশ্য আশার কার্টের তথ্য বলছে, বয়স ২৭ বছর। আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে তাঁকে সেভাবেই বাঁধা থাকতে দেখে আসছেন গ্রামের সবাই। কারণ, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। শুধু কি তাই? ওই বাড়ির আরও দুই মেয়েও মানসিক ভারসাম্যহীন। বাড়ি ছেড়ে কোথায় গিয়েছেন, কেউ জানেন না। কবে বাড়ি ফিরে আসবেন, সেটাও কেউ বলতে পারেন না।
ইংরেজবাজার ব্লকের নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত টেফলপুর গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা শেখ আক্তারার বড় মেয়ে হাসিনা শেখ। আক্তারা বয়স এখন ৭৫। একসময় দিনমজুরি করতেন। বছর কয়েক ধরে শরীর আর সঙ্গ দেয় না। শ্রমিকের কাজ করতে হয়। স্ত্রী মালেকা বিবি কয়েকটি ছাগল প্রতিপালন করেন। তাঁর বয়স ৬০ ছুঁইছুঁই। এই বৃদ্ধ দম্পতির চায়ের মেয়ে তিনদিন বিশেষভাবে সক্ষম। শুধুমাত্র বড় মেয়ে খানিকটা সুস্থ। অনেক চেষ্টাতে তাঁর বিয়ে দিতে পেরেছেন। একসময় তিন মেয়ের চিকিৎসা করিয়েছিলেন। কিন্তু খরচের ধাক্কায় বেশিদিন টানতে পারেননি।
বছর পনেরো আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেয়েদের বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য কোনও টাকা লাগেনি বটে, কিন্তু সেখানে যাতায়াত আর খাওয়ার জন্য শ’র শ’র বাজছিল। দিনদশেক পরেই মেয়েদের বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছিলেন বাবা। এখন চিকিৎসার প্রশ্নই নেই। দুবেলা পাঁচজনের পেটে ভাত জোটাতে পারেন না আক্তারা। মেয়েদের চিকিৎসা করানো এখন তাঁর কাছে দিবাস্বপ্নের মতো। গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বারান্দায় খুঁটিতে বাঁধা রয়েছেন গোলবানু। বাড়িতে রয়েছেন আক্তার সাহেব ও। কিন্তু স্ত্রী কিংবা বাকি দুই মেয়ের নেই। প্রতিবেশীরা জানালেন, মালেকা বিবি ছাগল চড়াতে গিয়েছেন। মেঘ কেটে গেলে আর ছোট টুম্পা কোথায় গিয়েছে কেউ জানেন না। দুদিন ধরে তাঁদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এখন সেই পরিবার শুধু আশ্রা দিন গুণছেন সরকারি সাহায্যের। সরকার যদি তাঁদের সাহায্য করে তাহলে পরিবারটি বেঁচে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন