ক্যানসারের অ্যানসার নেই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটাই যেন বাস্তব। কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা বাদ দিলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ক্যানসার রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম থাকে। পরিবারের কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে স্বাভাবিক কারণেই সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বছরের পর বছর ধরে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা ক্যানসার সারানোর ওষুধের সন্ধানে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বহু ক্ষেত্রে গবেষণার ফলও মিলেছে। গবেষক মহল শুরুতে ধরা পড়লে বিশেষ কিছু ক্যানসার সারিয়ে তোলা সম্ভব হতে পারে। তবে তা অ্যাডভান্সড স্টেজে চলে গেলে সেটা আর সম্ভব নয়।
তখন রোগীর মৃত্যুর দিন গোনা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। কিন্তু ক্যানসার চিকিৎসার এবার যথেষ্ট আশা জাগালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। এমন একটি ভাইরাস আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা কিনা ক্যানসার আক্রান্তের শরীরে ঢুকিয়ে দিলে সেটি ধ্বংস করে ফেলবে ক্যানসার কোষগুলিকে। অর্থাৎ ৩-৪ বছর আগে করোনা ভাইরাসে নিয়ে যখন মানুষের মধ্যে ‘যাচ্ছি তাই যাচ্ছি’ রব উঠেছিল, তখন অন্য একটি ভাইরাসকে ঘিরে এবার নতুন স্বপ্ন দেখছে বিশ্ব। তাই এবার কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলছেন বিজ্ঞানীরা।
মানব শরীরে জিনের গঠন বিন্যাস বদল করে সিএফ-৩০ নামে ভাইরাসটিকে তৈরি করেছেন আমেরিকা সিটি অফ হোপ হাসপাতালের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের গবেষকরা। প্রধান গবেষক ইউমান ফংয়ের নেতৃত্বে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই এই গবেষণা চলছে। গবেষকরা জানিয়েছেন একেবারেই সংক্রমণ ক্ষমতা নেই এই ভাইরাসের। সেই কারণেই পরীক্ষাগারে ভাইরাসটিকে তৈরি করা হয়েছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে বিশেষ প্রোগ্রামের সাহায্যে পরীক্ষাগারে এই ভাইরাসটিকে নিশ্চিত করে সেটি ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে। ভাইরাসটি তখন টিউমারের কোষে দেখনোই সেটিকে ধ্বংস করে ফেলবে। আর ভাইরাসের চিরচরিত প্রকৃতি অনুযায়ী এটি ক্রমশ বিভাজিত হয়ে ক্যানসার কোষগুলিকে ধ্বংস করবে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলির পাশে গিয়েই এরা সংখ্যায় বাড়তে থাকে। সেগুলি তখন কাজ করে অ্যান্টিজেন হিসাবে। স্বাভাবিকভাবে তখন তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি ক্যানসার কোষগুলিকে হটিয়ে দিতে বাধা দেবে। অর্থাৎ এই জোড়া সিস্টেম কাজ করে মারণ রোগের বিরুদ্ধে। মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই ভাইরাসটি নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে অনুমোদন দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট আশাবাদী এর কার্যকারিতা নিয়ে। ইতিমধ্যেই মানব শরীরে এর ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এরপর চূড়ান্তভাবে ভাইরাসটিকে ওষুধ হিসাবে মানব শরীরে ব্যবহারের ব্যাপারে ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে ভাইরাসটি ট্যাবলেট আকারে প্রয়োগ করা হবে, নাকি ইনজেকশনের মাধ্যমে সেটি মানব শরীরে প্রবেশ করানো হবে, সে সম্পর্কে কিছু জানাননি বিজ্ঞানীরা। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে যে, এই আবিষ্কার আগামীদিনে যুগান্তকারী রূপ নিতে পারে। এখন গোটা বিশ্ব অধীর আগ্রহে সেই খুশির খবরের দিকে তাকিয়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন