মৃত মায়াবী প্রেমিকার শিহরণ জাগানো মায়াবী প্রেমের সুরেরা গান শুনে, তার পিছু পিছু স্মৃতির মতো ছুটে চলেছে কাহিনীর নায়ক, তা সে যতই পূর্ব জন্মের হোক না কেন সেই প্রেমিকা। এই ধরনের সিনেমা আমাদের দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু অল্প বয়সের বা টিন এজের প্রেমের একটি ছবিকে ভৌতিক মোড়কে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক দিবা চট্টোপাধ্যায়। একদা সুপার-ডুপার হিট প্রেমের ছবি ‘অমর সঙ্গী’ নামের সাথেও এই নতুন ছবিটির নামও ‘অমর সঙ্গী’। এই ছবির নায়ক অনুরাগ এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাপ্রতিক ‘পারিয়া’ খ্যাত গুণী অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। নায়িকা জয়ীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহিনী সরকার। শৈশব থেকেই তাদের বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসা। কিন্তু সেই ভালোবাসা বা প্রেম পরিণতি পাওয়ার আগেই ঘটে যায় অঘটন। হট অ্যাটাক জনিত কারণে মৃত্যু হয় এই ছবির নায়িকা জয়ীর। কিন্তু এই মৃত্যু তাদের প্রেমে বিচ্ছেদ আনতে পারে না। অগত্যা প্রেমের টানে অশরীরী জয়ীর সাথে মৃত্যুর পরের নায়ক অনুরাগের প্রেম জমে ওঠে। অশরীরী জয়ীকে কেউ দেখতে পায় না শুধু অনুরাগ ছাড়া। এই ছবি দেখতে গেলে শুধু একটা প্রশ্নের ভয় না লাগলেও, যে সমস্ত দর্শকেরা প্রেমের ছবি দেখতে ভালোবাসেন, তাদের মনে একটা আলাদা অনুভূতির জন্ম দেবে।
পরিচালক দিবা চট্টোপাধ্যায়ের আগের ছবিগুলোর চেয়ে তাঁর অভিনয় শৈলী যে অনেকটাই পরিবর্তিত ও পরিণত হয়েছে, এই ছবিতে তা অবশ্যই লক্ষণীয়। একদিকে সাবলীল অভিনয় থেকে বুঝতে পারা যায়, অভিনেত্রী সোহিনী সরকার তার অশরীরী চরিত্রের অবয়বকে যথাযথভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন। ছবিতে ‘ড্রিম অন সেল’, ‘হ্যাভি ক্রাফটস পিকচারস’ এর একঝাঁক যোগ্য এবং প্রতিভাবান সদস্য সিনেমার কিছু সাহায্য লাগা অংশ পরিচালনা করেছেন। ছবিতে সিরিজের তার্ক কমেডি লেখার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পরিচালক দিবা চট্টোপাধ্যায় এবং ছবির শুটিংয়ের দুই ধরনের সহযোগিতায় গল্পটি তৈরি হয়েছে।
মানিয়েছে বাংলা সিনেমার নতুন রোমান্টিক জুটি বিক্রম এবং সোহিনীকে। অপেক্ষাকৃত ভাবে পার্শ্ব চরিত্রগুলির অভিনেতা অভিনেত্রী সকলের অভিনয়ের প্রয়োজন ছিল। সংগীতের ব্যবহার এই ছবিটিকে মোটামুটি ভালো লাগার মধ্যে ধরা যেতে পারে। ছবিতে মৌসুমী ভৌমিকের গাওয়া ‘রাইফেল’ গানটিও বেশ শ্রুতিমধুর। গানটির মিউজিক করেছেন তমালিকা গোষদস্তিদার। সোহমের অলি এ ছবির একটি গান লিখেছেন। অন্যান্য ছবির থেকে অনেক কম বাজেটের মধ্যেই পরিচালক দিবা চট্টোপাধ্যায় এ ছবির শুটিং শেষ করেছেন। শুটিংয়েও প্রধানত কলকাতাতেই। এই ছবিটির সিনেম্যাটোগ্রাফির দ্বায়িত্ব যথেষ্ট দক্ষতার সাথে কর্ম সম্পাদন করেছেন। ছবিটিকে আরো আকর্ষণীয় করার জন্য পরিচালক অনেকগুলি কায়দা ও চরিত্র ব্যবহার করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মায়াবৃতা, অর্কজা, তথাগত, অনুরাগ, অর্জনা এবং আরো অনেকে। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট উজ্জ্বল। তবে সিনেমার টেনথের প্রয়োজনে অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনীয় এবং অবাস্তব কিছু সুর তৈরি করা হয়েছে বলে মনে হয়। বিশেষ করে সিনেমার দ্বিতীয়ার্ধে অনেক বেশি সুর। নায়কের বন্ধুর চরিত্রে অনিরুদ্ধ গুপ্ত, শ্রীমা ভাটাচাৰ্য এবং দিবাস দাস যথেষ্ট সাবলীল অভিনয় করেছেন। সব মিলিয়ে প্রেমের ক্লাসিক গান ‘কলঙ্কিনী রাধা’ এবং এই সময়ের গান মিলিয়ে এক নতুন রোমান্টিক জুটি বিক্রম-সোহিনীর রসায়নে অনবদ্য প্রেম কাহিনী ‘অমর সঙ্গী’, প্রেমে মজে দর্শক মন কেড়ে নেবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন