কলকাতা: বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের কর্মিসভার বৈঠক থেকে দেশের সদ্যনিযুক্ত মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ ছিল, জ্ঞানেশ ‘বিজেপি-ঘনিষ্ঠ’। ইচ্ছা করেই তাঁকে ওই পদে বসানো হয়েছে। মমতার এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, মমতা সব জেনেশুনে জনগণের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি কলুষিত করতে চাইছেন।
রেশন কার্ডের মতো আধার-এপিক বায়োমেট্রিক লিঙ্কিংয়ের দাবি তুলেছেন শুভেন্দু। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আমরা মুখ্যমন্ত্রীর উল্লেখ করা ভিন্ন রাজ্যের ভোটারদের আমাদের জানানো হয়েছে। তাই এটা কারিগরিগত ভুল। এটা ভুঁয়ো ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ভুয়ো ভোটারদের নিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন এবং এ বিষয়ে এআরও ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের ভূমিকা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, রেশন কার্ডের মতো আধার ও এপিক কার্ডের বায়োমেট্রিক লিঙ্কিং বাধ্যতামূলক করা উচিত, যাতে ভুয়ো ভোটারদের চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায়।
এছাড়াও, তিনি অভিযোগ করেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করছেন। শুভেন্দু অধিকারীর মতে, এই ধরনের মন্তব্য নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে আঘাত করে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষ আস্থা নষ্ট করছে।
এই প্রেক্ষিতে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নির্বাচন কমিশনের কাছে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে ভোটার তালিকা থেকে ভূয়ো ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া যায় এবং এ ঘটনার মূলে যারা রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও আগে এই সমস্যা সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে রাজ্যের ভোটাররা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
এই ইস্যুতে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। দলের একাধিক নেতা শুভেন্দু অধিকারীর এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। এর আগে শুভেন্দু অধিকারী বিভিন্ন বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সম্প্রতি, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্যালিউট কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসচিবের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের দাবি জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া, সারদা কেলেঙ্কারি নিয়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, রাজ্য থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সরাতে ‘নো ভোট টু মমতা’ স্লোগান তোলা উচিত।
এই সমস্ত ইস্যুতে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এবং আগামী নির্বাচনে এই বিষয়গুলি কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে গেছে। তাই সেই ভোটের দিকে তাকিয়ে মমতা। দলের কর্মীদের এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপির দিকে। বৃহস্পতিবার মমতার বক্তব্যের বিরোধিতা করে কমিশনে চিঠি দিলেন শুভেন্দু।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন