নয়াদিল্লি: দেশে জনধন যোজনায় খোলা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা মোট ৫৫ কোটি ৭০ লক্ষ। এর মধ্যে প্রায় দেড় কোটিই বর্তমানে একপ্রকার নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। এই নিষ্ক্রিয় জনধন অ্যাকাউন্টগুলির একটি বড় অংশকে ব্যবহার করা হচ্ছে সাইবার প্রতারণায় হাতিয়ে নেওয়া টাকা ট্রান্সফারের জন্য। পরিস্থিতি এতটাই চরমে যে এবার খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নামতে হয়েছে আসরে। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে তাদের সুপারিশ, ওইসব নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হোক। সেই প্রস্তুতিই শুরু হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে যে জনধন অ্যাকাউন্টগুলিতে কোনওপ্রকার আর্থিক লেনদেন, টাকা জমা দেওয়া কিংবা তোলা, কিছুই হচ্ছে না, সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে। নিষ্ক্রিয় দেড় কোটি অ্যাকাউন্টের সবগুলিই বন্ধ করে দেওয়া হবে? নাকি কিছু অ্যাকাউন্ট গ্রাহককে নোটিস পাঠানো হবে? সেই সিদ্ধান্ত নেবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
মোদি সরকারের জনধন অ্যাকাউন্ট নিয়ে সাফল্যের প্রচার নিয়ে এর আগেও বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, বেশ কয়েক বছর আগে জানা যায় জনধন অ্যাকাউন্টের বিপুল সংখ্যক জিরো ব্যালান্স হয়েই পড়ে রয়েছে। অর্থাৎ দেশের গরিব মানুষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলছে, এই প্রবণতা দেখিয়ে সরকার স্রেফ গরিবি কমানোর কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠার পথে হেঁটেছে। আদতে অ্যাকাউন্ট চালু রাখার মতো নিয়মিত আর্থিক সাশ্রয় কিংবা আয় বহু মানুষের নেই। এরপর আবার বিতর্ক তীব্র হয় যখন জানা যায়, হঠাৎ বহু জনধন অ্যাকাউন্টে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষই সামান্য টাকা জমা করিয়ে দিয়ে জিরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কম করে দেখাতে সচেষ্ট। অভিযোগ ও বিতর্ক থামছেই না।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট জানাচ্ছে, নিষ্ক্রিয় জনধন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বিগত ডিসেম্বর মাসের তুলনায় আরও বেড়ে চলেছে। তেমনই সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতারিত করে সেই হাতিয়ে নেওয়া টাকা নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা জনধন অ্যাকাউন্টে জমা করার প্রবণতা আরও বড় সঙ্কটের সৃষ্টি করেছে। জমা হওয়া সেই টাকা তুলেও নেওয়া হচ্ছে। কীভাবে এটা সম্ভব? এই তদন্ত করতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একটি ‘মিউল হান্টার’ নামক একটি বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। সেই তদন্তে জানা যাচ্ছে, শুধুমাত্র ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার অধীনে থাকা এমন ‘নিষ্ক্রিয়’ জনধন অ্যাকাউন্টগুলিকে ১৪৭ কোটি টাকার প্রতারণার টাকায় ব্যবহার করা হয়েছে। এটা মাত্র ৬ মাসের পরিসংখ্যান। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত আর্থিক বছরে মোট ১৩ হাজার ৫১৬টি ডিজিটাল প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে, যার আর্থিক মূল্য ৫২০ কোটি টাকা। বিগত বছরগুলিতে শুধুমাত্র এই ডিজিটাল প্রতারণার লক্ষ্য নিয়েই এই একের পর এক জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে দেশজুড়ে।
প্রাথমিকভাবে প্রত্যেক অ্যাকাউন্টের কাছে কেওয়াইসি চাওয়া হবে। তারপর চলবে যাচাই পর্ব। তারপরই শুরু হবে অ্যাকাউন্ট বাতিলের প্রক্রিয়া। যদিও জনধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বেশ কিছু ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার জমা হয়। সেই কারণে ব্যাঙ্কগুলি ইচ্ছামতো অ্যাকাউন্ট বাতিল করতে পারছে না। তাই যে অ্যাকাউন্টগুলি নিষ্ক্রিয় এবং যেগুলি মাধ্যমে হয়ে চলেছে ডিজিটাল প্রতারণা, আগে সেগুলি চিহ্নিত হবে। তৃতীয় ত্রৈমাসিক থেকে শুরু হবে কেওয়াইসি গ্রহণ ও যাচাই পর্ব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন