প্লেটে আর এক হাতা মাংস তুলে নিয়ে গোপাল গল্প করছিল ওর এক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে। বন্ধুটি খেয়াল করল গোপাল যেন একটু বেশিই ঘামছে। বন্ধুটি বিষয়টি গোপালের নজরে আনতেই গোপাল হা হা হা করে হাসতে শুরু করল। বলল, আরে মোটা হচ্ছি। গরম করবে না? বলতে বলতেই গোপালের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। হঠাৎ করেই গা গুলিয়ে উঠল। কী যেন একটা অস্বস্তি। মাথাটা ভার। তারপর আর কিছু মনে নেই।
গোপাল নস্কর। ৩৯ বছরের তরতাজা যুবক। আলাপি। একটু স্থূলকায়। গোপাল খেতে ভালোবাসে। এই তো গত রবিবার, এক আত্মীয়ের ছেলের অন্নপ্রাশন বাড়িতে গোপাল গিয়েছিল নিমন্ত্রণ রক্ষার উদ্দেশ্যে। সেখানেই কথা বলতে বলতেই গোপাল অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। মাইল্ড স্ট্রোক। ভাগ্য ভালো পার্টিতে তখন একজন চিকিৎসক ছিলেন নিমন্ত্রিত। সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী হাসপাতালে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে গোপালকে পাঠালেন চিকিৎসার জন্য। হাসপাতালের চিকিত্সক জানালেন, অরিজিতের উচ্চ রক্তচাপের অসুখ আছে। অথছ গত একমাস ধরে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছিল না গোপাল! চিকিত্সকের অক্লান্ত চেষ্টায় প্রাণে বাঁচল গোপাল। গোপালের ৬ বছরের এক সন্তানও আছে। স্ত্রী গৃহবধূ।
প্রশ্ন হল, আমাদের স্বাভাবিক রক্তচাপ ঠিক কত? কীভাবে বাড়ে রক্তচাপ? কীভাবে রক্তচাপ বৃদ্ধির সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
স্বাভাবিক ব্লাড প্রেশার
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ এমএম এইচজি (মিলিমিটার অব মার্কারি)।
কখন বলব উচ্চ রক্তচাপ
কোনও ব্যক্তির রক্তচাপ ১৪০/৯০ কিংবা তার বেশি হলে আমরা বলি ওই ব্যক্তি হাই ব্লাডপ্রেশারের অসুখে ভুগছেন।
উচ্চ রক্তচাপের কারণগুলি:
* তামাক, জর্দা, গুটকা সেবন, ধূমপান, ঘনঘন চা, কফি পানের বদভ্যাসের কারণে আমাদের শরীরের রক্তবাহী নালিকাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রক্তবাহী নালীগুলি স্বাভাবিক নমনীয়তা হারিয়ে শক্ত হতে থাকে। এই কারণেও রক্তচাপ বাড়তে থাকে।
* আমরা জানি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের আদর্শ রক্তচাপ, ১২০/৮০। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপও বাড়তে থাকে। এভাবে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত রক্তচাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
* স্থূলত্ব, ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরলের সমস্যা, বংশে হাই ব্লাড প্রেশারের ইতিহাসও রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
* কিডনির অসুখ, ধমনিতে কোনও সমস্যা থাকলেও উচ্চ রক্তচাপের জটিলতা দেখা যেতে পারে।
* অ্যাড্রিনালিন গ্ল্যান্ড কর্টেক্স, মেডালার টিউমার এবং আরও কিছু অঙ্গের অসুখের কারণেও হাই ব্লাড প্রেশারের সমস্যা তৈরি হতে পারে। এই ধরনের উচ্চ রক্তচাপকে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন বলা হয়।
হাই ব্লাডপ্রেশারের লক্ষণ
সমস্যা হল, সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের কোনও উপসর্গ থাকে না। এমনকী দ্রুত ব্লাডপ্রেশার বেড়ে ১৮০/৯০ হয়ে গেলেও কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। কিছু কিছু রোগী যদিও মাথাব্যথা, শারীরিক অস্বস্তির কথা বলেন। তবে এও দেখা গিয়েছে, রক্তচাপ বেড়ে ১৯০/১২০ হয়ে গিয়েছে, অথচ রোগী শারীরিকভাবে কোনও সমস্যার কথা বলছেন না। এর ফলে রোগীর ব্লাড প্রেশার দ্রুত বেড়ে গিয়ে সরাসরি স্ট্রোক, রেনাল ফেলিওর, হার্ট ফেলিওর হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া থাকে।
চিকিৎসা
উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা না করে ফেলে রাখলে তা থেকে ব্রেন, চোখ, হার্ট, কিডনির অসুখও হতে পারে। বিশেষ করে রেটিনাল হেমারেজ, ভিট্রিয়াস হেমারেজ-এর মতো অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থাকে প্রবল। সুতরাং ব্লাডপ্রেশার থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো খেতে হবে ওষুধ।
সতর্কতা
* ব্লাড সুগার থাকলে নিয়মিত (সম্ভব হলে
প্রতি সপ্তাহে) ব্লাডপ্রেশার মাপুন। ডায়াবেটিসের সঙ্গে রক্তচাপ বৃদ্ধির
যোগাযোগ আছে। • কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলেও ব্লাড প্রেশারও চেক করে দেখুন
তা নিয়ন্ত্রণে আছে কি না। • ব্লাড প্রেশার বেশি থাকলে, রান্নায় নুন দেওয়ার
মাত্রা কমাতে হবে। মেন রাখবেন পাতে কাঁচা নুন কোনওমতেই খাওয়া যাবে না।
অনেকে মাটির খোলায় নুন ভেজে খান। তাতে কোনও লাভ হয় না। • এছাড়া একবার
মেনোপজ দেখা গেলে মহিলারা অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। রক্তচাপ কত
আছে দেখে নিন। • দৈহিক উচ্চতার অনুপাতে ওজন (বিএমআই) কত হওয়া উচিত তা
জানুন। কারণ মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক ওজন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বাড়ায়। •
অন্য কোনও অসুখের কারণে রক্তচাপ বাড়লে সেই রোগের চিকিৎসা করালে উচ্চ
রক্তচাপও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন