কাঁথি: উত্তাল হলেও উদার দীঘার সমুদ্র! দু’মাসের ব্যান পিরিয়ড কাটিয়ে মৎস্যজীবীরা ট্রলার নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন বঙ্গোপসাগরে। তিন-চার দিনের মধ্যেই তাঁদের জালে উঠল মরশুমের প্রথম ইলিশ। পাড়ে ফিরে আসা ট্রলার-লঞ্চের হিসেব বলছে, প্রায় ১৫ টন ইলিশ ধরা পড়েছে। তাতে হাসি ফুটেছে দীঘা মোহনার ফিশ মার্কেটের নিলামকেন্দ্রের মৎস্যজীবী, মৎস্য ব্যবসায়ী ও ট্রলার-লঞ্চ মালিকদের মুখে। ফলে, মোহনায় বুধবারের সকালটা ছিল অন্যরকম। ইলিশের গন্ধে ম-ম করছিল সর্বত্র। ব্যস্ততা ছিল সবার মধ্যে। মাছ কিনতে ভিড় জমিয়েছিলেন বেড়াতে আসা পর্যটকরাও। গত ১৫ জুন থেকে মাছ ধরার মরশুম শুরু হয়েছে। মৎস্যজীবীদের জালে উঠতেও শুরু করেছে ইলিশ। নিম্নচাপের কারণে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। সঙ্গে পূবালী হাওয়া। ইলিশ জালে পড়ার আদর্শ ওয়েদার। তবে, নিষেধাজ্ঞা না থাকা সত্ত্বেও সমুদ্র উত্তাল এবং বিপরীতমুখী প্রচণ্ড গতিতে ধেয়ে আসা হাওয়ার কারণে প্রায় ৭০ শতাংশ ট্রলার-লঞ্চ ফিরে এসেছে পাড়ে। তারপরও এই পরিমাণ ইলিশ উঠেছে। বাকি ট্রলার-লঞ্চগুলি ফিরে এলে আরও ইলিশ পাওয়া যাবে বলে জানাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। তবে, বাজারে চাহিদার চেয়ে জালে ওঠা ইলিশের পরিমাণ কম। তাই দামও বেশ চড়া। জোগান বাড়লে ইলিশের দাম সাধ্যের মধ্যে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেদিকেই হা-পিত্যেশ করে তাকিয়ে রয়েছে ইলিশপ্রিয় বাঙালি।
দীঘা সহ বিভিন্ন মৎস্যবন্দর ও মৎস্য আহরণ কেন্দ্রে ধরা পড়া ইলিশ এদিন মোহনা ফিশ মার্কেটে নিলামের জন্য আসে। বিভিন্ন কাঁটায় মাছ রাখার ক্যারেটগুলিতে থরে থরে সাজানো ছিল সমুদ্রের রূপোলি শস্য। মোহনা মার্কেট সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশ কেজি প্রতি সাড়ে ছ’শো কিংবা ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ কেজিপ্রতি দাম ছিল সাড়ে আটশো কিংবা ৯০০ টাকা। এক কেজি থেকে ১২০০ গ্রামের ইলিশ কেজি প্রতি দেড় হাজার বা ১৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিগত বছরগুলিতে ইলিশের খরা ছিল। মরশুমের শুরুর মুখে এত পরিমাণ ইলিশ ওঠেনি। এবার শুরুতেই মোটামুটি ভালো ইলিশ ওঠায় মৎস্যজীবী ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট আশাবাদী। কারণ অন্যান্য মাছের চেয়ে মহার্ঘ্য ইলিশ, পমফ্রেট জাতীয় মাছ বেশি উঠলে তাঁদের লক্ষ্মীলাভ হয়। হাতে দুটো পয়সা আসে। মোহনার আড়তদার নবকুমার পয়ড়্যা বলেন, ‘ইলিশ জালে উঠতে শুরু করেছে। তবে এই পরিমাণ ইলিশ যৎকিঞ্চিৎ বলা চলে। একসঙ্গে ৫০-৬০ টন ইলিশ উঠলে তখন ইলিশের ব্যাপক চাহিদা পূরণ হবে।’ দীঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘প্রথম থেকে যেভাবে আবহাওয়া লক্ষ্য করছি, তাতে ইলিশ জালে ধরা পড়ার পক্ষে অনুকূল। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর মৎস্যজীবীদের জালে প্রচুর ইলিশ উঠবে বলেই আমরা মনে করছি। এভাবে চলতে থাকলে দাম সাধ্যের মধ্যে আসবে এবং সব বাঙালির পাতেই ইলিশ উঠবে।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন