কান্দি: অবৈধ সম্পর্কের জেরে যুবককে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ ভরতপুরে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে কবরস্থানে যুবকের দেহটি পুঁতে রাখা হয়েছিল। মঙ্গলবার মাটি খুঁড়ে দেহ উদ্ধার করে পুলিস। নৃশংস এই ঘটনাটি ঘটেছে ভরতপুর থানার ভরতপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া। পুলিস জানিয়েছে, মৃতের নাম রহিদুল ইসলাম ওরফে মিঠুন শেখ (৩৭)। পশ্চিমপাড়াতেই তাঁর বাড়ি। পুলিস মৃতের প্রতিবেশী দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের জেরা করেই পুলিস দেহের সন্ধান পায়।
মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, যুবক মাংস বিক্রি করতেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ন’টা নাগাদ বৃষ্টির মধ্যে ওই যুবক স্কুটি নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তারপর একটি ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে নতুন হাওয়াই চপ্পল পায়ে দিয়ে বেরিয়ে যান। তারপর থেকে তাঁর আর খোঁজ মেলেনি। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েও সন্ধান পাননি। শুক্রবার পরিবারের লোকজন ভরতপুর থানায় যুবকের নিখোঁজ ডায়েরি করেন। শনিবার মৃতের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ওই যুবকের নতুন হাওয়াই চপ্পল জোড়া একটি পুকুর পাড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে রবিবার পুলিস ওই পুকুরে জাল ফেলে তল্লাশি করে নিস্ফল হয়।
ভরতপুর থানার পুলিস একটি ফোন কলের সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে দেখতে পায়, গত ২৫ দিন ধরে ওই নম্বর থেকে কেউ মৃত যুবকের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছে। শেষ কলটিও ওই নম্বর থেকেই এসেছিল। ফোনকলের সূত্র ধরেই প্রতিবেশী দুই যুবকের সন্ধান মেলে। সোমবার রাতে জিগর শেখ ও আফসার শেখ নামে ওই দুই যুবককে পুলিস গ্রেপ্তার করে। এরপর ধৃতদের জেরা করে খুনের ঘটনা জানতে পারে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত যুবকদের পরিবারের এক মহিলার সঙ্গে মৃত যুবকের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। যে কারণে দুইপক্ষের মধ্যে কয়েকবার মনোমালিন্য হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে জিগর শেখ রাত ন’টা নাগাদ রহিদুলকে ফোনে ডেকে নেয়। এরপর বাড়ির কাছে ওই পুকুরপাড়ে তিনজনে মদ খেতে বসে। সেখানে উভয়পক্ষের মধ্যে তীব্র বচসা হয়। ঝামেলার সময় আফসার মৃত যুবককে চেপে ধরে ও জিগর গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে।
মঙ্গলবার পুলিস ধৃতদের কান্দি মহকুমা আদালতে পাঠিয়ে পুলিস হেফাজতে নেয়। বিকেলের দিকে পুলিস ধৃতদের সঙ্গে নিয়ে ঝিকড়া গ্রামের কবরস্থান থেকে দেহটি উদ্ধার করে। সেটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, খুনের আগে ধৃত দুই যুবক মৃতের মোবাইল ও চপ্পল ছিনিয়ে নিয়েছিল। এরপর রাতেই মৃতদেহ কবরস্থানে নিয়ে যায়। পাঁচিল টপকে দেহ নিয়ে ভেতরে ঢুকে সেটি পুঁতে দেয়। মৃতের স্ত্রী সারজিনা খাতুন বলেন, আমি অসুস্থতার জন্য চারমাস ধরে বাপের বাড়িতে ছিলাম। তবে যারা আমার স্বামীকে খুন করল তাদের যেন চরম শাস্তি হয়। মৃতের মা দুলালি বিবি বলেন, আমার কোল যারা খালি করল তাদের সঙ্গে কোনও বিবাদ ছিল না। প্রতিবেশী হিসেবে মেলামেশাও ছিল। এমন ঘটনা ঘটবে তা চিন্তাও করতে পারিনি। মৃতের দিদি খুশি বেগম বলেন, ভাইয়ের ওই প্রতিবেশীদের বাড়িতে যাতায়াতও ছিল না। কাজেই অবৈধ সম্পর্কের কথা মানতে পারছি না। ধৃতদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন