বর্ধমান: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগের কর্মী ভক্ত মণ্ডলের প্রতি ভক্তি ছিল রাঘব বোয়ালদের। সেই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় দু’কোটি টাকা উধাও হয়ে গেলেও প্রথম দিকে কেউই তা টের পাননি। প্রথম পর্যায়ে সে নিখুঁত অপারেশন চালায়। কিছুদিন বিশ্রাম নেওয়ার পর দ্বিতীয় অপারেশন শুরু করে। অন্য আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্টের ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা সে গায়েব করার রূপরেখা চূড়ান্ত করে ফেলেছিল। কিন্তু এক ব্যাঙ্ক আধিকারিকের উপস্থিত বুদ্ধিতে তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সামনে চলে আসে আর্থিক কেলেঙ্কারির পুরো বিষয়টি। সিআইডি সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
কে এই ভক্ত মণ্ডল? সিআইডির তথ্য অনুযায়ী বছর ৩৮ এর যুবক অত্যন্ত ধূর্ত। কিভাবে সবাইকে ম্যানেজ করতে হয়, সেই মন্ত্র তার ভালই জানা ছিল। সেই কারণে সে প্রভাবশালীদের কাছে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কোন ব্যাঙ্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের কত টাকা ফিক্সড ডিপোটিজ রয়েছে, তা তার নখদর্পনে ছিল। ফলে দুর্নীতির অপারেশন চালাতে খুব বেশি মাথা খাটাতে হয়নি। সিআইডি অর্থ তছরূপের অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্ত ভক্তদের বদান্যতায় ভক্ত মণ্ডল এখনও অধরা।
কিভাবে অপারেশন চালাত ভক্ত? আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলার এফআইআরে বলা হয়েছে, ৭ ফেব্রুয়ারি বর্ধমানের বড়বাজার এলাকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তাকে ফোন করা হয়। ম্যাচুরিটি হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় কেন ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা একটি বেসরকারি সংস্থার অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করতে চাইছে? যে নথি দেখিয়ে টাকা তুলতে চাওয়া হয়েছিল, সেটি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়। সেটি দেখে দু’জন আধিকারিকের সই নকল করা হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করে। নথিটি যিনি ব্যাঙ্কে জমা করেছিলেন তাঁকে জেরা করা হয়। তিনি জানান, ভক্ত মণ্ডল নামে বিশ্বদ্যালয়ে এক কর্মী তাঁকে ব্যাঙ্কে নথি জমা করার জন্য বলে। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অ্যাকাউন্টগুলি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়। এরপরই কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, প্রায় দু’কোটি টাকা অন্যান্য অ্যাকাউন্টগুলি থেকে ইতিপূর্বে উধাও হয়ে গিয়েছে। সিআইডি জানতে পারে, এই একই কায়দাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘনিষ্ঠ ভক্তদের নিয়ে ভক্ত মণ্ডল টাকা হাপিস করে দিয়েছে।
সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মী মুক্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, অনেক তথ্য তদন্তকারীদের দিয়েছি। বলা হচ্ছে, দুই আধিকারিকের সই নকল করে নাকি টাকা উধাও করা হয়েছে। ব্যাঙ্ক থেকে দু’হাজার টাকা তুলতেও বারবার সই ভেরিফাই করা হয়। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে দু’কোটি টাকা উধাও হয়ে গেলেও কেউ কিছু টেরই পেল না! এটা বড় আশ্চর্যের। আদৌও সই নকল হয়েছিল তো? নাকি, পুরোটাই গা বাঁচানোর সাফাই। আইনের উপর আমার ভরসা রয়েছে। আশা করা যায়, সব ঘটনা সামনে আসবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন