আমেদাবাদ: পুড়ে দলা পাকিয়ে যাওয়া দেহ। ঝলসে যাওয়া দেহাংশ। কে বিমানযাত্রী, কে-ই বা মেডিক্যাল কলেজ হস্টেলের আবাসিক, চেনার উপায় নেই। তাহলে উপায়? শুধুই কি অনন্ত অপেক্ষা আর চোখের জল? আমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালের ওয়েটিং হলে পা রাখার জায়গা নেই। নিহতদের আত্মীয়-পরিজন তাঁরা। ড্রিমলাইনার তাঁদের সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। এখন তাঁরা শুধু প্রিয়জনের দেহের অপেক্ষায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তা ম্যাচ হওয়ার পরই মিলবে ‘বডি’। সবাইকে শনাক্ত করতে কত সময় লাগতে পারে? অন্তত ৭২ ঘণ্টা। ডুকরে কেঁদে উঠলেন রশিদ প্যাটেল। ওয়েটিং হল থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে চোখের জল মুছলেন। দাঁড়ালেন ব্লাড কালেকশন সেন্টারের সামনের একফালি জায়গাটায়। ভেঙে পড়া বিমানে ছিলেন তাঁর ভাইপো। বাড়ি ভারুচে। মোবাইল ফোনটা হাতে শক্ত করে ধরা। কান পেতে রয়েছেন, এই বুঝি নাম ধরে ডাকল! কাঁপা গলায় রশিদ বললেন, ‘জানেন ভাইপোটার বয়স মাত্র ২৫ বছর। পড়াশোনার জন্য প্রথমবার লন্ডন যাচ্ছিল। আর ওকে ফিরে পাব না। দেহটা না দেখে যে চিৎকার করে কাঁদতেও পারছি না!’ শুধু ওয়েটিং হল নয়, মর্গের সামনেও একই দৃশ্য। স্বজনহারা মানুষের কান্না, হাহাকার।
ব্লাড কালেকশন সেন্টারে রক্তের নমুনা দিলেন সাহিলের মা। ছেলের দেহ শনাক্ত করতে এসেছেন। কয়েক পা দূরে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছছিলেন পায়েল। বিধ্বস্ত। বললেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে মা (৪৫) ও ছোট্ট ভাইঝিটার (২) দেহ খুঁজে চলেছি। বিমানটা আছড়ে পড়ার সময় ওরা ছিল হাসপাতালের আবাসিক ফ্ল্যাটে। মা সেখানে রান্নার কাজ করছিল। সব শেষ হয়ে গেল।’ গতকাল বি জে মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসের আবাসিক ব্লকে ভেঙে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি। তখন সেখানে ছিলেন ট্রেনি চিকিৎসক, হাসপাতাল স্টাফ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। আচমকা বিমান ভেঙে বিস্ফোরণের ফলে আগুন ধরে যায়। হস্টেল ও কোয়ার্টারের বহু আবাসিকও রয়েছেন হতাহতের তালিকায়।
বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার পর থেকে আমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে এসেছে মোট ২৬৫টি দেহ। এখানেই হচ্ছে ময়নাতদন্ত। পুলিস ইনসপেক্টর চিরাগ গোসাই বলেন, ‘নিহতদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ছ’জনের শনাক্তকরণ সম্ভব হয়েছে। এই ছ’জনের মুখ অবিকৃতই ছিল। ফলে পরিজনদের চিনতে অসুবিধা হয়নি। এই দেহগুলি হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু বাকি দেহগুলি এমনভাবে পুড়ে গিয়েছে যে, দেখে চেনা অসাধ্য। তাই ডিএনএ প্রোফাইলিং চলছে। এখনও পর্যন্ত ২১৫ জন নিহতের আত্মীয় নমুনা দেওয়ার জন্য এসে পৌঁছেছেন। পোস্ট মর্টেম রুমে তাঁদের বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। এরপর ডিএনএ নমুনা দেওয়ার জন্য বি জে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হচ্ছে তাঁদের। ডিএনএ ম্যাচ হওয়ার পর নাম ধরে ডাকা হবে। তারপর দেহ সংশ্লিষ্ট আত্মীয়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’ কখন নাম ধরে ডাক আসে, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন রশিদ, সাহিলের মা, পায়েলরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন