
শ্রীনগর: ‘ওরা আমার স্বামীর ধর্ম নিয়ে কথা বলছিল। তারপর হঠাৎই গুলি চালায়। মুহূর্তে চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে। কী করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। মাটিতে রক্তাক্ত হয়ে পড়েছিল মানুষটা। বাঁচানোর জন্য সমানে চিৎকার করতে থাকি।’ কাঁপতে কাঁপতে এলোমেলো ভাবে এটুকুই বলছিলেন যুবতী। মঙ্গলবার জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলায় স্বামী হারিয়েছেন তিনি। মিনি সুইৎজারল্যান্ড বলে পরিচিত ভূস্বর্গের অন্যতম সুন্দর জায়গা বৈসরণ উপত্যকার বিস্তীর্ণ সবুজ প্রান্তরে এদিন চাপ চাপ রক্ত লেগে। ব্যাগ, জুতো যত্রতত্র পড়ে রয়েছে। প্রিয়জনের নিথর দেহ আগলে শুধুই আর্তনাদ। ইতিমধ্যেই ২৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সংখ্যাটি ক্রমবর্ধমান।
পহেলগাঁও
হিল স্টেশন থেকে বৈসরণ তৃণভূমির দিকে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন সকলে। হঠাৎই
এলোপাথাড়ি গুলি সব শেষ করে দেয়। কয়েকজন স্থানীয় মিলে রাস্তায় বসে থাকা এক
মহিলাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। স্বামীর মাথার কাছে ঠায়ে বসে রয়েছেন
তিনি। কিছুতেই নড়ছেন না। বিশ্বাস করতে পারছেন না স্বামী আর নেই। কাঁদতে
কাঁদতে সমানে বলে চলেছেন - ‘ভাইয়া প্লিজ মেরে হাজবেন্ড কো বাঁচা লো...’ ।
খানিক পর নীরব হয়ে যান তিনি। মাথায় গুলি লেগে ততক্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন ওই
ব্যক্তি। পুনে থেকে ঘুরতে এসেছিলেন সন্তোষ জাগদালের পরিবার। গুলি খেয়েছেন
সন্তোষ ও তাঁর ভাই। ওই ব্যবসায়ীর মেয়ে আশাভরী জানিয়েছেন, জঙ্গিরা বাবাকে
কলমা পড়তে বলেছিল। বাবা পারেনি। তারপরই মাথায়, কানে ও পিঠে গুলি করে তারা।
কাকাকেও পরপর গুলি করে। জানি না ওরা বেঁচে আছে কি না। এক প্রত্যক্ষদর্শী
জানিয়েছেন, জঙ্গিরা যখন গুলি চালাতে শুরু করে, স্থানীয়রা দ্রুত নিরাপদ
স্থানে লুকিয়ে পড়ে। হতভম্ব অবস্থা হয় পর্যটকদের। পরে উদ্ধার কাজে হাত লাগায়
স্থানীয়রা। কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন ঘুরতে আসা মানুষজন।
এদিন
দুপুর আড়াইটের দিকে পর্যটকদের উপর হামলা চালানো হয়। ইতিমধ্যেই হামলার দায়
স্বীকার করেছে লস্কর-ই-তোইবার স্থানীয় সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট
(টিআরএফ)। জঙ্গিদের সন্ধানে শুরু হয়েছে তল্লাশি অভিযান। জানা গিয়েছে,
শ্রীনগরে পৌঁছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠকও করেছেন কেন্দ্রীয়
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে এসবের ভিড়ে একেবারে থমথমে পহেলগাঁও। ঘাসের
গায়ে লেগে থাকা রক্ত যেন নিরাপত্তাহীনতা আর একরাশ অসহায়তার সাক্ষী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন